• আইনি ফাঁদে অচল হতে বসেছে বাইক–ট্যাক্সি?
    এই সময় | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সুগত বন্দ্যোপাধ্যায়

    আইনি ফাঁদে অচল হতে বসেছে অ্যাপ বাইপ–ট্যাক্সি পরিষেবা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের টাকায় ব্যক্তিগত কাজের জন্য কেনা মোটরবাইককে বাইক–ট্যাক্সির ব্যবসায় ব্যবহার করতে চাই বাণিজ্যিক পারিমিট। আর তা নিতে গিয়েই পড়তে হচ্ছে হাজারো ঝামেলায়।

    এই পারমিট নেওয়ার জন্য সরকারের লিখে দেওয়া বয়ানে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’(এনওসি) দিতে নারাজ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি। তাদের আশঙ্কা, এই বয়ানে এনওসি দিলে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে। ফলে কলকাতা ও শহরতলিতে চলা প্রায় ১৫ হাজার বাইক ট্যাক্সির মধ্যে প্রায় ৫০০টি বাণিজ্যিক পারমিট পেয়েছে জানুয়ারি পর্যন্ত।

    বাকি দু’মাসের মধ্যে আবেদন জানালেও সকলেই যে এই পারমিট পাবেন, তার নিশ্চয়তা নেই। এ দিকে রাজ্য সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ৩১ মার্চের পর বাণিজ্যিক পারমিট অর্থাৎ হলুদ নম্বর প্লেটের ছাড়া বাইক–ট্যাক্সি যাত্রী পরিষেবা দিতে পারবে না। পুলিশের হাতে ধরা পড়লেই প্রথমবার জন্য গুনতে হবে ৫ হাজার টাকা জরিমানা। ১৫ দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার ধরা পড়লে জরিমানা দাঁড়াবে ১০ হাজার টাকা।

    পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘এই পারমিট নিয়ে একটা সমস্যা রয়েছে। ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে কথা বলেছি। ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তাদের থেকে ঋণ নিয়ে কেউ মোটরবাইক কিনে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করলে অনুমতি তো লাগবেই। তারা এই অনুমতি না–দিলে কী করব? চেষ্টা করছি। দরকারে আরও কথা বলব।’

    কলকাতার বুকে এই মুহূর্তে পাঁচটি অ্যাপ ক্যাব সংস্থা বাইক–টাক্সি চালায়— ওলা, উবর, র‍্যাপিডো, ইনড্রাইভ আর যাত্রী–সাথী। এই সংস্থাগুলির কারও নিজস্ব মোটরবাইক নেই। প্রত্যেকটি সংস্থাই বাইক রয়েছে এমন মানুষকে বাইক–ট্যাক্সি চালানোর অনুমতি দেয়। আবার বহু মানুষ কোনও সংস্থায় নথিভুক্ত না–হয়ে ব্যক্তিগত ভাবেও পরিষেবা দেন।

    অথচ এঁদের কারও মোটরবাইক বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য পারমিট নেই। রাজস্ব সংগ্রহ ও যাত্রী নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ১৯৮৯ সালের মোটর ভেহিকল আইনকে সামনে রেখে বাইক–ট্যাক্সিকে বাধ্যতামূলক ভাবে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য পারমিট নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। গত কয়েক বছর ধরে এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সরকারি নির্দেশিকাও প্রকাশিত হয়েছে।

    অনেকেই সরকারি নির্দেশিকা মেনে নিজের মোটরবাইককে বাইক–ট্যাক্সি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য বাণিজ্যক পারমিট নিতে উদ্যোগী হলেও আইনি জটিলতায় পিছিয়ে গিয়েছেন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইনমাফিক ইএমআই থাকা মোটরবাইককে বাণিজ্যিক পারমিট দেওয়া যাচ্ছিল না।

    কারণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি বাইক কেনার সময়ে মালিক ও তাঁর গাড়ির নম্বরের পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ দিয়ে থাকে। কিন্তু বাণিজ্যিক পারমিট দেওয়ার পরে গাড়ির নম্বর প্লেটের রং সাদা থেকে হলুদ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছিল গাড়ির নম্বরও। এতেই এএমআই–এ চলা বাইকগুলি নিয়ে আইনি সমস্যা তৈরি হয়।

    এই সমস্যার কথা কেন্দ্রীয় ভূতল পরিবহণ মন্ত্রকের নজরে আনে রাজ্য সরকার। তারপরই কেন্দ্র মোটরবাইকে ইউনিক নম্বর চালু করে। ফলে বাইক–ট্যাক্সির জন্য মোটর সাইকেলের নম্বর বদল করতে হবে না। বদলাবে শুধু নম্বর প্লেটের রং। সাদা থেকে হবে হলুদ।

    তারপরও পারমিট দেওয়া নিয়ে জটিলতা কাটল না। সরকারি নির্দেশিকায় বলা হয়, ইএমআই রয়েছে যাদের, তাদের সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের থেকে এনওসি আনতে হবে। পরিবহণ দপ্তর থেকে এনওসি–র বয়ানও তৈরি দিয়েছে। সেখানেই নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ওই বয়ানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি এনওসি দিতে নারাজ।

    এরপরও রয়েছে আরটিওতে হয়রানি। বাইক–ট্যাক্সির মালিক আব্দুল ওয়াকির কথায়, ‘সব কাগজ জমা দিয়েও ৪৫ দিন লাগল বাণিজ্যিক পারমিট পেতে। অসম্ভব হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। পাঁচ বছরের জন্য এই পারমিট দেওয়া হয়েছে।’

    কলকাতা সাবার্বান বাইক–ট্যাক্সি অপারেটারার্স ইউনিয়নের নেত দেবু সাহুর কথায়, ‘পরিবহণ দপ্তর এক কথা বলছে। আরটিও–তে গেলে অন্য কথা শুনতে হচ্ছে। তাদের কাছে সরকারি নির্দেশিকাই পৌঁছয়নি। অথচ পরিবহণ দপ্তর প্রথম কয়েকটি শিবির খুলে বাইক–ট্যাক্সির জন্য বাণিজ্যিক পারমিট দেওয়ার কাজ করেছিল। পরে ১৭ ডিসেম্বর সরকারি নির্দেশিকা প্রকাশ করে প্রতিটি আরটিও–কে বলা হয় সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করতে হবে। বুধবার পারমিট দিতে হবে। এই পর্যন্তই। বাস্তবে কাজ কামাই করে পারমিটের জন্য আরটিও অফিসে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’

  • Link to this news (এই সময়)