• ধান–গমেও ক্যাডমিয়াম, চিন্তা বাড়াচ্ছে বিশেষজ্ঞদের
    এই সময় | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • শ্যামগোপাল রায়

    ধান–গমের মতো শস্যে মিশছে ক্যাডমিয়াম। ক্রমশ এই ভারী ধাতুর উপস্থিতি বাড়ছে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে চাষ হওয়া শস্যে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ়ের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য, যা চিন্তা বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

    কারণ, ধান–গমের মতো শস্যের মাধ্যমে এই ভারী ধাতু শরীরে ঢুকে নিঃশব্দে কিডনি বিকল করে তুলতে পারে। সেই সঙ্গে যে শরীরের নানা অংশের হাড়েরও ক্ষতি করার ক্ষমতা রয়েছে এই ক্যাডমিয়ামের, তেমনটাই জানানো হয়েছে ওই গবেষণায়। শুধু জনস্বাস্থ্য নয়, কৃষিজমির জন্যও এই ভারী ধাতু ক্ষতিকর। কারণ, এই ধাতু জমির উর্বরতা কমিয়ে দেয়। যার ফলে কমে যায় জমির ফলন।

    ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪–এর নভেম্বর পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ জন গবেষক বাংলার নানা প্রান্তের চাষের জমি থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। পরীক্ষা শেষে তাঁরা কৃষিজমিতে এবং ধান–গমের মতো শস্যে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়ামের সঙ্গে ক্যাডমিয়ামের মতো ভারী ধাতুর উপস্থিতি পেয়েছেন। কলকাতা লাগোয়া উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক জমিতেও এই ক্যাডমিয়ামের হদিশ মিলেছে।

    কী এই ক্যাডমিয়াম?

    পরিবেশ বিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর কথায়, ‘যে সকল ভারী ধাতু রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ক্যাডমিয়াম। ভুল প্রক্রিয়ায় ফসল চাষ হলে মাটির মধ্যে এই ধাতুর মাত্রা বেড়ে যায়। ওই ফসল এবং সেখান থেকে তৈরি খাবার মানব শরীরে ঢুকলে তা বিপজ্জনক।’ ওই গবেষণার মুখ্য গবেষক তড়িৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘বাংলার কৃষিজমিতে ক্যাডমিয়ামের উপস্থিতি আমরা পেয়েছি এবং এর পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। এটি মাটিকে দূষিত যেমন করে, তেমনই শস্যের মধ্যে জমা হয়ে মানব শরীরে ঢুকে নানা রোগ সৃষ্টি করে।’

    ডায়েটিশিয়ান অরিজিৎ দে–র বক্তব্য, ‘ক্যাডমিয়াম হচ্ছে প্রাকৃতিক ভাবে প্রাপ্ত একটি বিষাক্ত ভারী ধাতু। ইটাই-ইটাই রোগটি ক্যাডমিয়াম থেকেই হয়। এটি একটি অত্যন্ত বিষাক্ত শিল্প এবং পরিবেশগত দূষণকারী যা মানব শরীরে ক্যান্সারের জন্ম দিতে সক্ষম। ক্যাডমিয়ামের সংস্পর্শে ক্যান্সার–সহ বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায় স্বাস্থ্যে।’ ক্যাডমিয়ামের সংস্পর্শে ফ্লু–র মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে এবং ফুসফুসেরও ক্ষতি হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী সংস্পর্শে কিডনি, হাড় এবং ফুসফুসের রোগ হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

    এই ধাতু থেকে শস্যকে কী ভাবে বাঁচানো সম্ভব? গবেষণাপত্রে সে বিষয়টিও তুলে ধরেছেন যাদবপুরের বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ঠিকমতো মাটির পরিচর্যার পাশাপাশি উপযুক্ত পরিমাণে জল এবং জীবজগতের সহায়তাযুক্ত বায়ো–অ্যাজ়মেন্টেশন ব্যবহার করলেই সুফল মিলবে।’

  • Link to this news (এই সময়)