এই সময়: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য, ২০২৬–এর বিধানসভা নির্বাচনে দুই–তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে চতুর্থবার বাংলায় তৃণমূল সরকার গঠন করা। সেই লক্ষ্যপূরণে সংগঠনে যেখানে যত ফাঁকফোকর রয়েছে, দ্রুত তা পূরণ করতে চান তৃণমূলনেত্রী। দলের একেবারে নিচুতলা থেকেই প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে তৃণমূলের সমস্ত বিধায়ককে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রদবদলের খসড়া প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দিলেন মমতা। বিধানসভায় সোমবার নওসার আলি কক্ষে তৃণমূলের বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করেন দলনেত্রী।
এই বৈঠকে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও উপস্থিত ছিলেন। সূত্রের খবর, সেখানেই তৃণমূলের প্রত্যেক বিধায়ককে তাঁর বিধানসভা এলাকায় ব্লক, অঞ্চল, বুথ স্তরে দলীয় সংগঠনে কোথায় কোথায় বদল করা প্রয়োজন, তার খসড়া প্রস্তাব জমা দিতে বলেছেন মমতা। তৃণমূলের দলীয় সংগঠন ছাড়াও ওই বিধানসভা এলাকায় ছাত্র, যুব, মহিলা, শ্রমিক–সহ বিভিন্ন শাখা সংগঠনের যেখানে পদাধিকারী বদল করা প্রয়োজন, সেই প্রস্তাবও সংশ্লিষ্ট বিধায়ক পাঠাতে পারবেন। প্রতিটি পদের ক্ষেত্রে অন্তত তিনটি নাম পাঠাতে হবে। তৃণমূলনেত্রীর নির্দেশ, দলের কোর কমিটির নেতা অরূপ বিশ্বাসের কাছে লিখিত ভাবে এই প্রস্তাব জমা দিতে হবে।
সূত্রের দাবি, মমতা এই বৈঠকেই দলের সমস্ত বিধায়ককে আপাতত ব্লক স্তর পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক রদবদলের প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘কে ব্লক সভাপতি হবে, কে কোন পদে থাকবে, তা আমিই ঠিক করব।’ যেখানে তৃণমূলের বিধায়ক নেই, সেখানে এই প্রস্তাব পাঠানোর দায়িত্ব পাশের কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক অথবা ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জোড়াফুল প্রার্থী কিংবা অন্য কোনও নেতাকে দেওয়া হতে পারে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
বুথ থেকে ব্লক স্তর পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক বদলের জন্য বিধায়কদের প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হলেও জেলা সভাপতি পর্যায়ে অদলবদলের কথা এ দিন তৃণমূলনেত্রী বলেননি। গত বছর চোখের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পদে অদলবদলের খসড়া প্রস্তাব দলনেত্রীর কাছে জমা দিয়েছিলেন। এই বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই যথাযথ সময়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে কয়েক সপ্তাহ আগে ডায়মন্ড হারবারে ‘সেবাশ্রয়’ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর জানিয়েছিলেন অভিষেক।
বিধানসভায় গত শীতকালীন অধিবেশনের সময়ে মমতা একই ভাবে সমস্ত বিধায়কখএ নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকে তিনি স্পষ্ট বলেছিলেন, সুব্রত বক্সী–সহ প্রথম সারির নেতাদের নিয়ে তিনিই দল চালাবেন। সেই বৈঠকেও তিনি ছাত্র–যুব’র মতো কয়েকটি শাখা সংগঠনের নেতৃত্বে বদলের কথা বলেছিলেন। এই সব সাংগঠনিক রদবদলের লক্ষ্য যে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন, তা সোমবার বিধায়কদের বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা। সূত্রের খবর, দলে ‘গ্রুপবাজি’ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে বিধায়কদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দলে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। একসঙ্গেই বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বিধানসভা ভোটে দুই–তৃতীয়াংশ আসন পাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’
সদ্যসমাপ্ত দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে ভোটার তালিকায় গরমিল নিয়ে এর আগে অভিযোগ উঠেছে। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া না–মেনে অনলাইনে ভোটার তালিকায় নাম তোলা হয়েছে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে খবর এসেছে। জোড়াফুল নেতৃত্বের অভিযোগ, এই ভাবে অন্তত ৪৫ লক্ষ ভোটার বাড়ানো হয়েছে এবং ভোটার তালিকায় এই অস্বচ্ছতার সুযোগ বিজেপি নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের কাজ যাতে না–হয়, সেই দিকে বিধায়কদের কড়া নজর রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, ভোটার তালিকা সঠিক ভাবে তৈরি করা হচ্ছে কি না, তা অঞ্চল ও বুথ স্তরের নেতৃত্ব খেয়াল রাখেন।
সেখানে নজরদারি না–থাকলে ভোটার তালিকায় গরমিল করার সুযোগ থাকে। এই কারণেও বিধায়কদের বুথ, অঞ্চল, ব্লক স্তরে প্রয়োজনীয় রদবদলের প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূলের একাধিক নেতার পর্যবেক্ষণ। বুথ স্তরে কী ভাবে কাজ করা উচিত, তার উদাহরণ হিসেবে জোড়াফুলের বিধায়ক মোশারফ হোসেনের কথা উল্লেখ করেছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘মোশারফ যে ভাবে বুথে বসে থেকে কাজ করেছেন, সেই ভাবে বুথে বুথে কাজ করতে হবে।’ বিধায়কদের বেফাঁস মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি যেখান সেখানে খাবার না–খাওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।