• অতিবিরল বিবিই–তে মৃত্যু মহারাষ্ট্রে, রোগী ভর্তি কলকাতাতেও
    এই সময় | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • মহারাষ্ট্রে কয়েক সপ্তাহ ধরে ভালো রকম মাথাচাড়া দিয়েছে গিইয়ান ব্যুরে (জিবি) সিনড্রোম। তাতে মৃত্যুও হয়েছে একাধিক রোগীর। এরই মধ্যে পুনেতে জিবি সিনড্রোমে আক্রান্ত এক ব্যক্তির গত সপ্তাহে মৃত্যু হয়েছে আর একটি অতিবিরল স্নায়ুরোগে। সেটির নাম, বিকারস্টাফ ব্রেনস্টেম এনকেফালাইটিস (বিবিই)। যা আদতে জিবি সিনড্রোমেরই একটি সাব-টাইপ।

    বিরলের মধ্যে বিরলতম এই অসুখে কলকাতাতেও ভুগছে একটি শিশু। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এতে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে ওঠে, হারিয়ে যায় ভারসাম্য। রোগ ধরা পড়তে দেরি হলে মৃত্যু অনিবার্য।

    পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ (আইসিএইচ) হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক আইসিইউ (পিকু)-তে জিবি সিনড্রোমে আক্রান্ত যে দুই শিশুর চিকিৎসা চলছে, তাদেরই মধ্যে একজন বিবিই সন্দেহভাজন। আপাতত ভেন্টিলেশনে চিকিৎসাধীন থাকা ওই শিশুর চিকিৎসক, পিকু ইনচার্জ প্রভাসপ্রসূণ গিরি বলেন, ‘জিবি সিনড্রোমে সাধারণত মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয় না।

    মূলত সেনসরি, মোটর ও অটোনোমাস নার্ভাস সিস্টেম আক্রান্ত হয়। কিন্তু খুব সামান্য কিছু জিবি সিনড্রোমের রোগীর ক্ষেত্রে কয়েকটি অ্যান্টিবডির প্রতিক্রিয়ায় মস্তিষ্কও প্রভাবিত হয়ে পড়ে। তখনই বিবিই সন্দেহ করা হয়।’ ঠিক যেমনটা হয়েছে আইসিএইচে ভর্তি ওই শিশুর। এখন অপেক্ষা, তার অ্যান্টিবডি টেস্টের রিপোর্টের। রাজ্যের আর কোনও হাসপাতালে এমন কোনও রোগী ভর্তির খবর নেই।

    আরএন টেগোর হাসপাতালের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ অনিমেষ কর জানাচ্ছেন, অতিবিরল হলেও মাঝে মধ্যেই এই বিপুল জনসংখ্যার শহরে এই রোগের দেখা মেলে। তিনি অন্তত তিন জন বিবিই রোগীর চিকিৎসা করেছেন গত কয়েক বছরে। তাঁর কথায়, ‘বিবিই হলো জিবি সিনড্রোমেরই একটা ধরন, যা চট করে দেখা যায় না। তবে খুব কম সংখ্যক জিবি সিনড্রোমে ভোগা রোগীর ক্ষেত্রে অ্যান্টি-জিকিউ-১বি আইজিজি অ্যান্টিবডির অতিসক্রিয়তায় ব্রেনস্টেমও প্রদাহের কবলে পড়ে।’ তিনি জানান, রোগটা গোড়াতেই ধরা পড়ে গেলে ভালো। চিকিৎসায় সেরে যায়। অন্যথায় এড়ানো মুশকিল হয় প্রাণহানির আশঙ্কা।

    স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যদি জিবি সিনড্রোমে ভোগা রোগীর হাঁটাচলা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে, চোখে ডাবল ভিশনের সমস্যা দেখা দেয়, দু’চোখের মণিই স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে গিয়ে চোখ েটরা হয়ে যায়, চোখের মণি ঘোরাতে সমস্যা হয়, কথা জড়িয়ে যায় এবং সঙ্গে মানসিক বিভ্রম ও প্রলাপ বকার উপসর্গ থাকে, তখনই চিকিৎসকরা বিকারস্টাফ ব্রেনস্টেম এনকেফালাইটিস সন্দেহ করেন।

    দ্রুত প্লাজ়মা এক্সচেঞ্জ (প্লেক্স) এবং ইন্ট্রেভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন (আইভি আইজি) থেরাপি শুরু করলে রোগী সেই চিকিৎসায় সাড়া দিতে দেরি করে না। তবে দেরি হলে সমূহ বিপদের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ৫% ক্ষেত্রে প্রাণহানি ঘটেই যায়।

    তবে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এ অসুখ এতটাই বিরল যে ১০ লক্ষে বড়জোর সাত-আট জনের হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সপ্তাহ তিনেক পেট খারাপ ও জ্বরের উপসর্গ থাকার পর স্নায়ুতন্ত্রে ও মস্তিষ্কে প্রভাব পড়ে। কথা জড়িয়ে যায়, ভারসাম্য হারিয়ে যায়। সঙ্গে থাকে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ও শ্বাসপ্রশ্বাসের নানা সমস্যা।

    ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর জেজুনি, মাইকোপ্লাজমা নিউমোনি, হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জি ইত্যাদি জীবাণুর সংক্রমণে শরীরের ইমিউনিটি বহিরাগত শত্রুকে আক্রমণ করার বদলে নিজের শরীরেই হামলা চালিয়ে বসে। তাই এই অসুখকে অটো-ইমিউন ডিজ়িজ় বলে। দূষিত খাবার, অপরিশ্রুত জল, এমনকী কখনও-সখনও ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকেও এই রোগের আশঙ্কা থাকে।

  • Link to this news (এই সময়)