• ভিক্ষুকের বাড়িতে উদ্ধার লক্ষাধিক টাকা, দান ধর্মীয় স্থানে
    এই সময় | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, ভগবানগোলা: বেঁচে থাকার লড়াই ছিল তাঁর রোজনামচা। প্রতিদিন এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভিক্ষার জন্য ছুটে বেড়াতেন বছর আশির অসেনুর বেওয়া। দিনের শেষে লোকের দেওয়া যে টুকু পেতেন তা দিয়েই ক্ষুন্নিবৃত্তি করতেন। কিন্তু মৃত্যুর পরে ঘরের ভিতর বিভিন্ন কাপড়ের পুটলি খুলতেই বেড়িয়ে এল ‘যক্ষের ধন’!

    একে একে বেরলো ১০ টাকা, ৫০ টাকা ও ১০০ টাকার বান্ডিলগুলো। রীতিমতো টাকা গোনার জন্য গ্রামের ১০ জন মাতব্বরকে দায়িত্ব দেওয়া হলো। খবর দেওয়া হলো পুলিশকেও। তাদের সামনেই সেই টাকা গোনা হয়েছে নিহতের ছেলে-মেয়েদের উপস্থিতিতে।

    দেখা যায়, ওই বৃদ্ধা তিল তিল করে মোট ২ লক্ষ ২৩ হাজার ৪১৪ টাকা নিজের ঘরেই সঞ্চয় করে রেখেছেন। মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা থানার বেলিয়াচকপাড়া এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধা অসেনুর বেওয়া। চার ছেলে-মেয়ে থাকলেও কেউ মাকে দেখতেন না। এক চিলতে কুঁড়েঘরেই বাস করতেন তিনি। পেট চালানোর তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তি করেই দিন গুজরান করতেন। বার্ধক্যজনিত কারণে রবিবার সকালে ওই বাড়িতেই মৃত্যু হয় তাঁর।

    মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়েই চার ছেলে-মেয়ে হাজির হন। এরপরেই বাড়ির জিনিসপত্র সরিয়ে দেখতেই উদ্ধার হয় বান্ডিল বান্ডিল টাকা। কাপড়ের পুটলি, বালতি, হাঁড়িতে চালের মধ্যে থেকে উদ্ধার হয় ১০ টাকার নোট থেকে শুরু করে ১০০, ২০০, ৫০০ টাকার নোটের গাদা-গাদা বান্ডিল সঙ্গে প্রচুর খুচরো পয়সা। যা দেখে রীতিমতো চক্ষু চড়কগাছ গ্রামবাসীদের।

    গ্রামবাসী হাজি মোহাসেন বলেন, ওই বৃদ্ধা প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতেন। ভিক্ষাবৃত্তি করে বিকেলের পর ফিরতেন। ভিক্ষাবৃত্তি করে এত পরিমাণ টাকা সঞ্চয় করেছে আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। নিহত বৃদ্ধার ছেলে আবুল হোসেন বলেন, ‘আমার মা একাই ওই বাড়িতে থাকতেন। মায়ের ঘর থেকে দু’লক্ষের বেশি টাকা উদ্ধার হয়েছে। আমরা চার ভাই-বোন। ওই টাকার ভাগ কেউ নেব না। কোনোও মসজিদে মায়ের জমানো টাকা দান করে দেওয়া হবে।’ বৃদ্ধার পুত্রবধূ সাইফুন বেওয়া বলেন, ‘শাশুড়ি মা কোনওদিন কাউকে বলেননি উনি এত টাকা জমিয়ে রেখেছেন। তবে এই টাকায় আমাদের কোনও অধিকার নেই।’

    প্রসঙ্গত, গ্রামের মোড়লের সিদ্ধান্ত মতো এই টাকা দান করা হবে। ওই গ্রামের মোড়ল সাবিরুল ইসলাম বলেন, ‘বৃদ্ধার ছেলেমেয়ের উপস্থিতিতে গুনে দেখা যায় মোট দুই লক্ষ ২৩ হাজার টাকার বেশি টাকা রয়েছে। সকলে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ওই টাকা ধর্মীয় স্থানে দান করে দেওয়া হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)