এই সময়: সুপ্রসিদ্ধ ভারত রঙ্গ মহোৎসব–এ নাটক পরিবেশনের আমন্ত্রণ পাওয়াটা যে কোনও নাট্যদলের কাছেই স্বপ্ন। ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা–র তরফে সদ্য ভোপালে আয়োজিত এ বারের ভারত রঙ্গ মহোৎসবে নাটক পরিবেশনের স্বপ্ন পূরণের পরেই ফেরার পথে দুঃস্বপ্ন সঙ্গী হলো দমদমের বিশ্বরূপম নাট্যদলের। ট্রেনযাত্রায় ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হলো দলের সদস্যদের।
ভোপালের ভারত ভবনে এ বারের উৎসবে ‘চরণদাস’ নাটকটি মঞ্চস্থ করেন বিশ্বরূপমের সদস্যরা। ৮ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ গোটা দল ভোপাল থেকে ২২৯১১ শিপ্রা এক্সপ্রেসে ওঠে কলকাতায় ফেরার জন্যে। গোলমালটা শুরু হয় কয়েক ঘণ্টা পর সকাল ৯টা নাগাদ। ট্রেন তখন মধ্যপ্রদেশেরই পাথারিয়া স্টেশনে ঢুকেছে। নাট্যদলের পক্ষ থেকে বিশ্বরূপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘হঠাৎই আমরা দেখি আমাদের এসি–থ্রি কামরায় হুড়মুড় করে প্রচুর লোক ঢুকতে শুরু করেছেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা আবিষ্কার করি, আমাদের একটি ল্যাপটপ ক্যারিয়ার, প্রপ রাখার দু’টি ব্যাগ, নাটকে ব্যবহারের দু’টি বাদ্যযন্ত্র রাখার ব্যাগ এবং একটি ভ্যানিটি ব্যাগের খোঁজ নেই।’ নাট্যদলের সদস্যরা জানিয়েছেন, এই সময়ে সাহায্যের জন্যে ক্রমাগত রেলের ১৩৯ নম্বরে ফোন করা হয়, রেলরক্ষীদেরও ডাকা হয়। কিন্তু কোনও সাহায্যই মেলেনি। আরও বেশ কিছুক্ষণ পর ট্রেন প্রয়াগরাজ স্টেশনে ঢুকলে আরও ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয় বিশ্বরূপদের।
প্রয়াগরাজে অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে শ্রেয়া সাহা, পাপিয়া দাস, ঐন্দ্রিলা চৌধুরী, সৌমি সাহারা বলেন, ‘পাথারিয়াতে রেলরক্ষীদের দেখা মেলেনি। কিন্তু প্রয়াগরাজ স্টেশনে রেলরক্ষীরাই যাত্রীদের আমাদের কামরায় ঢুকে পড়ার জন্যে উৎসাহিত করছিলেন। ওঁদের উস্কানিতেই বেপরোয়া ও উচ্ছৃঙ্খল যাত্রীরা আমাদের মতো মহিলাদের পর্যন্ত হেনস্থা করতে শুরু করেন। হাত মুচড়ে দেওয়া হয়, ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।’ পুরো সময়টাই রেলরক্ষীরা দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন বলে অভিযোগ নাট্যদলের সদস্যদের।
এর পর ট্রেন যখন গোমো স্টেশনে পৌঁছয়, সেই সময়ে লোহার রড হাতে বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতী শিপ্রা এক্সপ্রেসের এম–ওয়ান কামরায় ঢুকে যাত্রীদের অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে শুরু করে। ওই কামরাতেই ছিলেন বাংলার নাট্যদলটির সদস্যরা। যাত্রাপথে দফায় দফায় বিভিন্ন জায়গায় দুষ্কৃতীদের হাতে নিগৃহীত হওয়ার পর তাঁদের জীবনীশক্তি ততক্ষণে তলানিতে। সোমবার দমদমে এসে তাঁরা রেলপুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা করেন। দলের সদস্যরা জানিয়েছেন, কয়েক দফায় যা যা হয়েছে সে নিয়ে রেলের হেল্পলাইনে ফোন করে, রেল মদদ অ্যাপে জানিয়ে এবং রেলরক্ষীদের ডেকে সাহায্যের আবেদন করেও সাড়া পাননি। দুষ্কৃতীরা কামরার মধ্যে যা যা করেছে, তার ভিডিয়ো বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটে পোস্ট করার পরেও ভারতীয় রেলের তরফে যোগাযোগটুকু পর্যন্ত করা হয়নি।
এ নিয়ে মন্তব্য করেননি ওয়েস্ট সেন্ট্রাল রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক হর্ষিত শ্রীবাস্তব। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের আমন্ত্রণে ভিন রাজ্যে অনুষ্ঠান করতে যাওয়া বাংলার নাট্যদলের ট্রেনে এমন হেনস্থায় প্রশ্ন উঠেছে ট্রেনে সুরক্ষা নিয়ে। অথচ রেলের তরফে নিয়মিতই প্রচার করা হয়—বিপদে পড়লেই যাত্রীরা যেন ১৩৯ ডায়াল করেন। দূরপাল্লার ট্রেনে যাত্রীদের সব রকমে সাহায্যে ‘রেল মদদ’–অ্যাপ সতত সজাগ বলেও দাবি করে রেল। রেলরক্ষীবাহিনীর জওয়ানরা, ট্রেন ম্যানেজার এবং ভারতীয় রেলের অন্য বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা নিয়মিত ট্রেনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে টহল দেন বলেও যাত্রীদের নিয়মিত আশ্বস্ত করে রেল। কার্যক্ষেত্রে কিন্তু কিছুই কাজ করেনি।