দেব গোস্বামী, বোলপুর: ছোট থেকেই শিল্পচর্চার প্রতি আগ্রহ তাঁর। মাটি, রং, তুলি নিয়ে সৃষ্টির নেশা। যত সময় এগিয়েছে, বেড়েছে উদ্ভাবনী শক্তি। বিশ্বভারতীর কলাভবনে পেন্টিং বিষয়ে পড়াশোনা রবিউল খানের। তিনিই এবার ফোর্বস ইন্ডিয়ার তালিকায় জায়গা করে নিলেন। তাঁর এই সাফল্যে গর্বিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ও।
এবার ডি গুকেশ, যশস্বী জয়সওয়ালদের সঙ্গে ফোর্বস ইন্ডিয়ার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বভারতীর কলাভবনের প্রাক্তনী রবিউল খান। অনূর্ধ্ব ৩০-এর তালিকায় ভারতবর্ষে একমাত্র শিল্প বিভাগে বাংলার এই শিল্পী রয়েছেন বলে খবর। ইতিমধ্যেই ফোর্বস ইন্ডিয়ার তরফে তাঁকে ফোন ও ইমেল মারফত এই সম্মান-পুরস্কারের কথা জানানো হয়েছে।
দুবরাজপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম আদমপুর ডাঙালপাড়ায় জন্ম রবিউল খানের। পেশায় ছোটখাটো ব্যবসায়ী বাবা রফিক খান স্কুলের গণ্ডি পার করেননি। কখনও ফেরি করে জিনিস বিক্রি করেছেন। কখনও আবার মাথায় করে জিনিস বয়ে দৈনিক উপার্জন করেছেন। নিজে পড়াশোনা না করলেও শিল্প ও শিক্ষার প্রতি বিশেষ অনুরাগ ছিল তাঁর। ছেলেকে পড়াশোনা করিয়ে বড় করার অদম্য ইচ্ছা ছিল বাবার। সেজন্য ছেলে রবিউলকে দুবরাজপুর শহরে নিয়ে চলে আসেন রফিক খান। দুবরাজপুর সারদা বিদ্যাপীঠ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হন রবিউল।
ছোট থেকেই শিল্পচর্চার প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। তাই স্কুলের পড়ার ফাঁকে শান্তিনিকেতনে এসে শিল্পশিক্ষা নিতেন। পরে ২০১৬ সালে বিশ্বভারতীর কলাভবনে পেন্টিং বিষয়ে ভর্তি হন৷ ২০২২ সালে স্নাতকোত্তর করেন রবিউল। পাশাপাশি চলতে থাকে নিজের মতো শিল্পচর্চা। শিল্পের বিকাশ ও প্রসারের জন্য রবিউল সহপাঠীদের নিয়ে ‘গাবা’ নামে একটি আর্টিস্ট কালেকটিভ অর্থাৎ শিল্পচর্চার প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। যে কেউ এখানে নিজের মতো করে শিল্পের যাপন করতে পারবেন। শিল্পী রবিউল বলেন, “বাবার শিল্পের প্রতি ভালো লাগা ছিল৷ সেই তাগিদেই শান্তিনিকেতনে পড়তে আসা। বিশ্বভারতীর কলাভবন থেকেই পড়াশোনা। প্রতিটি পুরষ্কার কাজ করার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়। আমি জানতে পারি ভারতবর্ষে আর্ট ক্যাটাগরিতে আমিই একমাত্র এই পুরষ্কার পাচ্ছি। “
মাত্র ২৭ বছর বয়সী এই শিল্পী এর আগেও নেদারল্যান্ডসের প্রিন্স ক্লজ সিড পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও তাঁর ঝুলিতে ইতিমধ্যেই রয়েছে একাধিক সম্মান। বেঙ্গল বিনালেও নক্সীকাঁথার ঘর তৈরি করে নজর কেড়েছিলেন তিনি। তাঁর এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত শান্তিনিকেতনের কলাভবনের পড়ুয়া ও প্রাক্তনীরা।