মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি বা ম্যাকাউট-এ ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার পর মঙ্গলবার দিনভর উত্তপ্ত হয় ক্যাম্পাস। রেজিস্ট্রারের পদত্যাগের দাবি ওঠে, পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় বাতিল হয় পরীক্ষা। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পড়ুয়াদের অভিযোগ, সোমবার রাতে কোনও অ্যাম্বুল্যান্স চালক ক্যাম্পাসে ছিলেন না বলে এই বড় ঘটনা ঘটল। এই ঘটনায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চরম উদাসীনতার অভিযোগ তুলে রেজিস্ট্রারের পদত্যাগের দাবি করেন ছাত্ররা। দিনভরের চাপানউতর শেষে রাতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য। জানান, তিন জন অ্যাম্বুল্যান্স চালক নিয়োগ করা হয়েছে।
এ দিন ছাত্র বিক্ষোভের কারণে দীর্ঘ সময় অধ্যাপক, অধ্যাপিকা, শিক্ষাকর্মীদের প্রতিষ্ঠানের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। উপাচার্য, রেজিস্ট্রার দফায় দফায় বৈঠক করেন অন্যান্য আধিকারিকের সঙ্গে। এর পরই রাতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে উপাচার্য তাপস চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের একটা খামতি ছিল আমি নিজেই দেখতে পাচ্ছি। সেটা যাতে না থাকে তাই একটু আগেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তিন জন অ্যাম্বুল্যান্স চালক থাকবেন। ৮ ঘণ্টা করে ডিউটি তাঁদের। তাঁরা ক্যাম্পাসেই থাকবেন। থাকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, সোমবার বিকালে সায়নী সেন (২৪) নামে এমটেকের এক ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সে দিন পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে ওই ছাত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সন্ধ্যা তখন ৭টা। প্রশাসনিক ভবনের উপরে তাঁর ব্যাগ, চশমা পড়ে থাকতে দেখা যায়। এর পরই দেখা যায় প্রশাসনিক ভবনের নীচে রক্তাক্ত অবস্থায় ওই ছাত্রী পড়ে আছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হরিণঘাটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই ঘটনার পরই উত্তেজনা ছড়ায় ক্যাম্পাসে। তাঁর সহপাঠীদের দাবি, যখন তাঁকে উদ্ধার করা হয়, তখনও বেঁচে ছিলেন। অভিযোগ, ক্যাম্পাসে অ্যাম্বুল্যান্স থাকলেও, চালক না থাকায় তা ব্যবহার করা যায়নি। এ দিকে ক্রমেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সায়নী।
এর পরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন ম্যাকাউটের পড়ুয়ারা। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পুলিশের হস্তক্ষেপে সেই অবরোধ ওঠে। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আসলে তাঁকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান ছাত্র ছাত্রীরা। তাঁদের প্রশ্ন, কেন ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা পাওয়া যাবে না? রেজিস্ট্রারকে ভিতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়।
মঙ্গলবারও এই ঘটনা ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। এ দিন দুর্গাপুর থেকে ছাত্রীর পরিবারের লোকজন আসেন। মেয়ের মৃত্যু নিয়ে ছাত্রীর বাবা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য জানান, পরিবারের তরফে এখনও তাঁদের কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। তাঁদের সঙ্গে পরিবারের কেউ কথাও বলেননি। তবে হরিণঘাটা থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।