স্টাফ রিপোর্টার: ‘বৃদ্ধতন্ত্র’ হটিয়ে, এরিয়া থেকে জেলা এবং রাজ্য কমিটিতেও তরুণদের সংখ্যা বাড়িয়ে, মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, সৃজন ভট্টাচার্য, দীপ্সিতা ধর, প্রতীক উর রহমানদের সামনে এনে ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টা করছে বঙ্গ সিপিএম। কিন্তু তারপরও পার্টির রোগমুক্তি হচ্ছে না। হারিয়ে যাওয়া ভোটও ফিরছে না। তাই রোগমুক্তির দাওয়াই খুঁজতে এবার নিচুতলায় যাবেন শীর্ষ নেতারা।
সিপিএমের উপলব্ধি, নীচুতলায় পার্টির শক্তি, জনসমর্থন না বাড়লে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। তাই নয়া কৌশল নেওয়ার কথা ভাবছে আলিমুদ্দিন। আসন্ন রাজ্য সম্মেলনে গোড়ায় গলদ খুঁজতে কী করা দরকার, সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পার্টি সম্মেলনে বিভিন্ন কমিটিতে সদস্যদের গড় বয়স নিয়ে আগেই উল্লেখ করা হয়েছিল চিঠিতে। তরুণ প্রজন্মের নেতা-নেত্রীদের কমিটিতে গুরুত্ব দিতে কার্যত নজিরবিহীন নির্দেশিকা দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল এরিয়া ও জেলা কমিটির সদস্য বা নেতৃত্বের বয়স।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নেতৃত্বে প্রজন্ম বদলের পথে এগেতে চাইছে সিপিএম। পক্ককেশ কমরেডদের ধীরে ধীরে বিদায় জানিয়ে সংগঠনে তরুণদের এগিয়ে আনার মতো একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে পার্টি। কিন্তু সংগঠনের হাল ফিরছে না কিছুতেই। তরুণ প্রজন্মকে তুলে আনতে গিয়ে অনভিজ্ঞতা কি ‘বোঝা’ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেই প্রশ্ন উঠছে পার্টিতে। কারণ, সিপিএমের তরুণ প্রজন্মের বড় অংশই শুধুমাত্র ফেসবুকে ‘বিপ্লবী’ হয়ে ওঠেন। তাছাড়া, তরুণ প্রজন্মকে সামনে এনেও গত লোকসভা নির্বাচনে পার্টির রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। প্রায় সব তরুণ প্রজন্মের প্রার্থীরই জমানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে গত লোকসভা ভোটে। একের পর এক ভোট যুদ্ধে পরাজয়ের পর হতাশা গ্রাস করেছে সিপিএমের পার্টি সদস্য তো বটেই, কর্মী ও সমর্থকদের। তাই এবার নিচুতলার রোগ খুঁজতে নামছে আলিমুদ্দিন। ২০১১-য় রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পর একের পর এক নির্বাচনে রক্তক্ষরণ চলছেই। উনিশের লোকসভা ভোটে বিপর্যয়। একুশের বিধানসভায় শূন্য আসন, আর চব্বিশের ভোটেও কাটেনি শূন্যের গেরো। তাই সিপিএমের শীর্ষ নেতারা এবার নীচুতলার নেতৃত্বের ক্লাস নেবেন। তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। জনসংযোগের পাঠ চলবে নীচুতলায়। কর্মসূচিতে কোথায় খামতি থাকছে তা বোঝার চেষ্টা করা হবে। স্থানীয় স্তরে পার্টির নিত্যদিনের কাজ কী, তারও খতিয়ান নীচুতলায় গিয়েই নেবেন জেলা ও রাজ্য নেতারা।
পাশাপাশি তরুণ নেতৃত্বকে পার্টির কাজে আরও অভিজ্ঞ করে তুলতে হাতেকলমে ক্লাসও নেবেন রাজ্য নেতৃত্ব। প্রসঙ্গত, ঘুরে দাঁড়াতে একের পর এক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেও কোনও ফল আসছে না আলিমুদ্দিনের কাছে। একুশের বিধানসভা ভোটে শূন্য হওয়ার পর গত রাজ্য কমিটির সম্মেলনে প্রবীণদের বড় অংশকে কার্যত ছুটি দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে কমিটিতে আনা হয়েছে। এরপর একের পর এক কর্মসূচিতে তাদের এগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আবার ২০২৪ এর লোকসভা ভোটের আগে গত জানুয়ারিতে দলের যুব সংগঠনের নেতাদের সামনে রেখে ব্রিগেড সমাবেশ করেছিল আলিমুদ্দিন। তারপর লোকসভা ভোটেও সিংহভাগ প্রার্থীই ছিল তরুণ মুখ। তাতেও কোনও লাভ হয়নি। বাড়েনি ভোট। মানুষ ভরসা করেনি।