বহুতলে অগ্নিকাণ্ডের দায় নিল না বোলপুরের বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষ
বর্তমান | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সংবাদদাতা, বোলপুর: বেঁচে যাব ভাবতে পারিনি—সোমবার বোলপুরের বহুতল আবাসনে ভয়াবহ অগ্নির গ্রাস থেকে কোনওরকমে রক্ষা পেয়ে অভিজ্ঞতা ভাগ করলেন বাসিন্দারা। ঘটনার ১২ ঘণ্টার পরও সবার চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। এদিকে, অগ্নিকাণ্ডে মৃত বৃদ্ধ দুই দম্পতির দেহ মঙ্গলবার ময়নাতদন্তের পর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। তবে, বারবার বোলপুরের বহুতল আবাসনে আগুন লাগার ঘটনায় দমকল ও বোলপুর পুরসভার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যদিও, বর্তমান পুরসভা এই ঘটনার দায় নিতে নারাজ। চেয়ারম্যান পর্ণা ঘোষ বলেন, আগের বোর্ডের আমলে এই বহুতল নির্মিত হয়েছে। অনুমোদন কীভাবে পেল, বলতে পারব না। আগামীদিনে যাতে এই ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে, তার জন্য অগ্নি নির্বাপনের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হবে। সামনের বোর্ড মিটিংয়েই সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গত শুক্রবারও বোলপুরের স্কুলবাগানের একটি বহুতলে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। তার রেস কাটতে না কাটতে সোমবার সন্ধ্যায় শ্রীনিকেতন রোডের বাঁধগোড়া মোড়ের একটি পাঁচতলা আবাসনে একইভাবে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে। স্বাভাবিকভাবেই দুর্ঘটনার পিছনে বেশ কিছু গাফিলতি সামনে এসেছে। ওই আবাসনে ছিল না কোনও অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। বেরনোর রাস্তা দু’টি হলেও একটিতে সাইকেল ও অন্যান্য সামগ্রী রাখা ছিল। সেটি আবার দীর্ঘদিন তালাবন্ধ ছিল। আসা-যাওয়ার দ্বিতীয় গেটের পাশেই রয়েছে মিটার ও মেইন সুইচের বক্স। আবাসিকরা সেই মিটারের সামনেই নিজেদের বাইকগুলি রাখতেন। তাতেই তৈরি হয়েছিঢ় মৃত্যুফাঁদ। শর্ট-সার্কিটে আগুন লাগার ফলে ওই আগুন বাইকে লেগে যায়। মুহূর্তেই বাইকগুলি পেট্রল ট্যাঙ্ককে গ্রাস করে নেয়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। পাশের একটি রেস্টুরেন্টের কর্মী বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ট্রান্সফরমারের জাম্পার নামিয়ে দেন। তাতে প্রাণহানির ঘটনা কম ঘটে। আবাসিকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। বৃদ্ধ দম্পতি স্বপনকুমার নন্দী ও অঞ্জু নন্দী নিচে নেমে কালো ধোঁয়া ও আগুনের কবলে পড়েন। সেখান থেকে তাঁরা আর ফিরতে পারেননি। জখম হয়েছেন অনেকেই। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সকলে।
এদিন প্রাণে বেঁচে ফেরাদের মধ্যে সুপর্ণা দাস ও তাঁর পরিচারিকা সুজাতা কোড়া বলেন, ‘ভাবতেই পারছি না বেঁচে ফিরব। কালো ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে পারছিলাম না। বাচ্চা নিয়ে কী করব, খুঁজে না পেয়ে সকলের চিৎকারে ছাদে উঠি পড়ি। তাই বেঁচে গিয়েছি।’ অন্য এক আবাসিক, পেশায় শিক্ষিকা ইপ্সিতা ধর বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে এই ফ্ল্যাটে থাকি। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর স্কুল থেকে ফিরে বিশ্রাম করছিলাম। এমন সময় চিৎকার ও বারবার বিস্ফোরণের আওয়াজে ভয় পেয়ে যাই। অন্ধকার তো ছিলই, ধোঁয়ার ঘনত্ব এতই বেশি ছিল যে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। বুদ্ধি করে সঙ্গে ভিজে টাওয়েল রেখেছিলাম। তবে নিচে নামলে আর বেঁচে ফিরতাম না। ভাগ্যিস ছাদের দরজা তালা ছিল না। না হলে কেউই বাঁচতেন না।’ শহরের বুকে পরপর দুটি আবাসনে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার ঘটনায় চিন্তিত এলাকাবাসী। অনুমোদন ও প্ল্যান পাস নিয়ে বোলপুর পুরসভা ও দমকলের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।