গ্রাম দখলে দুই গোষ্ঠীর লড়াই, দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বন্ধের দাবিতে সরব কেতুগ্রামের চেঁচুড়ির বাসিন্দারা
বর্তমান | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সংবাদদাতা, কাটোয়া: কার দখলে থাকবে গ্রাম—তা নিয়েই লড়াই। আর সেই লড়াই চলে প্রায় নিত্যদিন। গ্রামের পথেঘাটে, হাটে-বাজারে দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি। এসব আর সহ্য করতে পারছেন না কেতুগ্রামের চেঁচুড়ি গ্রামের বাসিন্দারা। এখনই দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য বন্ধের দাবি তুলেছেন তাঁরা। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিস। তা নিয়েও ক্ষোভে ফুঁসছেন সকলেই। কারা মজুত করল বোমা? সে ব্যাপারেও পুরোপুরি অন্ধকারে পুলিস।
রবিবার সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে প্রায় গোটা গ্রাম। বাসিন্দা মেহেবুব আলমের বাড়িতেই বিস্ফোরণটি ঘটে বলে পুলিস সূত্রে খবর। তাঁর পুরানো বাড়িতে বোমা মজুত ছিল। কর্মসূত্রে তিনি কলকাতায় থাকেন বহু বছর ধরে। বিস্ফোরনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে বাড়ির শৌচালয়ের পাশের কংক্রিটের পিলার ভেঙে গিয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, বিধানসভা ভোটের আগের রাতেই কেতুগ্রামের চেঁচুড়িতে বোমা মেরে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে খুন করা হয় তৃণমূলের বুথ সভাপতিক মিন্টু শেখকে। ঘটনায় জখম হয়েছিলেন মিশির শেখ ওরফে নজরুল ইসলাম। ওই ঘটনায় ১০ জনের নামে অভিযোগ রয়েছে।
চেঁচুড়ি গ্রামের কয়েক কিমি দূরেই মুর্শিদাবাদ জেলা। বাসিন্দাদের দাবি, গ্রামে প্রায়ই বোমাবাজি করেই পড়শি জেলায় লুকিয়ে পড়ে দুষ্কৃতীরা। তাদের ধরতে গেলে হিমশিম খেতে হয় পুলিসকে। আগেও গ্রামে বোমা উদ্ধার হয়। গ্রামের বাসিন্দা নিহত মিন্টু শেখের বিরুদ্ধ গোষ্ঠী বলে পরিচিত রেনেসা বিবি বলেন, দুষ্কৃতীরা প্রায়ই গ্রামে বোমাবাজি করে। আমরা শান্তি চাইছি। অনেকেই গ্রামছাড়া। ভয়ে বাড়ির বাইরে বেরতে পারছি না। এখনও অনেক বোমা মজুত রয়েছে। বোমা বিস্ফোরণের পরেই গ্রাম থেকে কয়েকজন পালিয়ে গিয়েছে। আমরা চাই, পুলিস তাদের ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করুক। তা হলেই লুকিয়ে রাখা আরও বোমার খোঁজ মিলবে। কেতুগ্রাম থানার এক অফিসার জানান, আমরা তদন্ত করছি। দুষ্কৃতীদের রেয়াত করা হবে না। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চেঁচুড়ি গ্রাম দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি বহু বছর ধরেই চলছে। দুটি গোষ্ঠী রয়েছে তাদের। দু’পক্ষের মধ্যে প্রায়ই ঝামেলা বাধে। এর আগেও গ্রামে বোমাবাজি হয়েছে। জখম হয়েছেন অনেকেই। ফল স্বরূপ খুন হতে হয় তৃণমূলের বুথ সভাপতি মিন্টু শেখকে। এদিন সিপিএম নেতা মিজানুল কবীর ধীরাজ বলেন, শাসকদলের গোষ্ঠী দ্বন্দের ফল ভুগতে হচ্ছে গ্রামের সাধারণ মানুষজনকেও। কার হাতে ক্ষমতা থাকবে, তা নিয়েই লড়াই। আমরাও চাই, অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি বন্ধ করুক পুলিস। কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ শাহনেওয়াজ অবশ্য বলেন, আমাদের দলে কোনও দ্বন্দ নেই। পুলিস তদন্ত করছে। মঙ্গলবারও চেঁচুড়ি গ্রাম ছিল থমথমে। গোলমালের আশঙ্কায় অনেকেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। -নিজস্ব চিত্র