নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: চেক বাউন্স মামলায় বিবাদী প্রৌঢ়কে কোর্ট চত্বরেই বাটাম দিয়ে পর পর আঘাত করলেন এক মহিলা। মঙ্গলবার তমলুক জেলা ও দায়রা কোর্ট চত্বরে ওই ঘটনায় হুলস্থুল বেধে যায়। মহিলাকে গাড়িতে তুলে তমলুক থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ফের কোর্ট চত্বরে এনে সিজেএম কোর্টে তোলা হয়। ওই ঘটনার জন্য বিচারকের সামনে হাতজোড় করে ক্ষমা চান ওই মহিলা। তবে, কোর্ট থেকে বেরিয়েই ফের রণং দেহী মুডে ওই মহিলা নিজের ব্যাগ থেকে পর পর হাতা, খুন্তি, রুটি বেলার বেলনি দেখান। অভিযুক্তের উপর হামলার জন্য তিনি প্রস্তুত হয়ে এসেছিলেন বলে জানান।
কোলাঘাট থানার চিমুটিয়া গ্রামের অমল মাইতি সাইকেল দোকান তৈরির জন্য ২০১৪ সালে প্রতিবেশী কৃষ্ণা বর্মনের কাছ থেকে চার লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সুদের বিনিময়ে ওই টাকা দিয়েছিলেন কৃষ্ণাদেবী। তিনি মেচেদায় মাছের দোকান চালান। ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ অমল মাইতি একটি চেক কৃষ্ণাদেবীকে দিলে সেটি বাউন্স করে। এরপর আদালতে চেক বাউন্স মামলা দায়ের করেন কৃষ্ণাদেবী। তারপর ১১টা বছর কেটে গিয়েছে। এক দশকের বেশি সময় আদালতে আসা যাওয়া করে হতাশ কৃষ্ণাদেবী। মঙ্গলবার তমলুক সিজেএম কোর্টে ওই মামলার দিন ছিল। ইতিমধ্যে মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ। এবার রায়দান প্রক্রিয়া বাকি আছে। তার আগে মঙ্গলবার আদালত চত্বরে হুলস্থুল বেধে যায়।
সকাল ১১টা নাগাদ জেলা ও দায়রা আদালতের সামনে নাইনলের ব্যাগ থেকে একটি বাটাম বের করে অমল মাইতিকে পর পর তিনবার সজোরে আঘাত করেন কৃষ্ণাদেবী। মার খেয়ে চিৎকার করে পালানোর চেষ্টা করেন অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি। কোর্ট ক্যাম্পাসে আইনজীবী, ল’ক্লার্ক, বিচারপ্রার্থীদের আনাগোনা লেগেই রয়েছে। আচমকা ওই ঘটনায় সকলেই হতভম্ব হয়ে যান। তড়িঘড়ি আদালতে ডিউটিরত পুলিস কর্মীরা ওই মহিলাকে ধরে জিআরও অফিসে নিয়ে যান। সেখান থেকে পুলিসের গাড়িতে তুলে তাঁকে তমলুক থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
আদালত চত্বরে এই ঘটনায় মহিলাকে তড়িঘড়ি থানায় কেন নিয়ে যাওয়া হল তানিয়ে কৃষ্ণা বর্মনের আইনজীবী জিআরও অফিসে গিয়ে প্রশ্ন করেন। তড়িঘড়ি ওই মহিলাকে থানা থেকে কোর্টে ফেরানো হয়। এরপর তাঁকে মুখ্য বিচারকের এজলাসে তোলা হয়। কোর্ট চত্বরের মধ্যে তিনি এরকম ঘটনা কেন ঘটালেন, তা নিয়ে প্রশ্ন করেন বিচারক। ধৈর্য হারিয়ে তিনি এরকম একটি ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানান। কৃতকর্মের জন্য বিচারকের সামনে ক্ষমাও চেয়ে নেন। আদালতের বাইরে বেরিয়ে কৃষ্ণা বর্মন বলেন, অমল মাইতি আমার প্রতিবেশী। একটি সাইকেল দোকান তৈরির জন্য আমার কাছে টাকা ধার চেয়েছিলেন। আমি চার লক্ষ টাকা সুদের বিনিময়ে দিয়েছিলাম। তারপর আমাকে একটি চেক দেওয়া হলেও তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা ছিল না। এরপর চেক বাউন্স মামলা দায়ের করি। তারপর ১১ বছর কেটে গিয়েছে। অপরদিকে, ওই ব্যক্তি দিব্যি সাইকেল ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্রোধ থেকেই আদালতে ওই ব্যক্তির উপর হামলা করেছি। আমি ব্যাগের ভিতর হাতা, খুন্তি, বাটাম, বেলনি নিয়ে এসেছিলাম। ওর উপর হামলা করতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। অমল মাইতি বলেন, ওই মহিলা ভীষণ বেপরোয়া। আদালত চত্বরে এসে আমার ওপর হামলা করেছে। উনি আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এখন সবটাই বিচারাধীন বিষয়। উনি বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা হারিয়ে নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছেন।-নিজস্ব চিত্র