• গাড়ির চাকাতে পিষ্ট পুরুলিয়ার ৩ মহিলা
    বর্তমান | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: কুম্ভমেলা যাওয়ার পথে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল পুরুলিয়া জেলার তিনজনের। মৃতদের প্রত্যেকেই মহিলা। তাঁরা টামনা থানার গোপলাডি গ্রামের বসিন্দা। পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনায় কুন্তী মাহাত(৭৫), আলপনা মাহাত(৪৪) ও জাগরী মাহাতর(৪৮) মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুন্তীদেবী ও আলপনাদেবী সম্পর্কে শাশুড়ি-বউমা। কুন্তীদেবীর পরিবারের মোট পাঁচজন কুম্ভমেলার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু কারও আর কুম্ভে যাওয়া হল না। তার আগেই সবকিছু শেষ হয়ে গেল দুর্ঘটনায়।


    গত রবিবার পুরুলিয়া চাকলতোড় মোড় থেকে একটি বাস ও দুটি চারচাকা গাড়ি রওনা দেয় প্রয়াগরাজের উদ্দেশে। আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম মিলিয়ে ৬০ জনের বেশি তীর্থযাত্রী কুম্ভে রওনা দিয়েছিলেন। বাসে ছিলেন গোপলাডি গ্রামেরই ১৩ জন বাসিন্দা। এরমধ্যে কুন্তীদেবীর পরিবারেরই পাঁচজন ছিলেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কুন্তীদেবীর তিন ছেলে। এরমধ্যে বড় ছেলে বাবুলাল মাহাত ও পুত্রবধূ আলপনা মাহাত তাঁকে নিয়ে কুম্ভে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিল বাবুলালবাবুর ১৫ বছরের ছেলে শুভজিৎ ও কুন্তীদেবীর মেজ ছেলের মেয়ে রিয়া মাহাত(১৪)। আর এক মৃত মহিলা জাগরীদেবী কুন্তীদেবীর প্রতিবেশী। তিনি ও তাঁর স্বামী কৃষ্ণকিশোর মাহাত কুম্ভে যাচ্ছিলেন। 


    ওই বাসের অন্যান্য যাত্রীরা জানান, মঙ্গলবার ভোরবেলায় প্রয়াগরাজ ঢোকার ৩০ কিলোমিটার আগে নাগনাথপুর এলাকায় ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে একটি পেট্রল পাম্পে বাসটি দাঁড়ায়। সেখানে প্রাতঃক্রিয়া সেরে ফের রওনা দেওয়ার কথা ছিল। সেইমতো কুন্তীদেবী, আলপনাদেবী ও জাগরীদেবী পেট্রল পাম্প থেকে কিছুটা দূরেই রাস্তার ধারে ফাঁকা জায়গা দেখে প্রাতঃক্রিয়া সারতে গিয়েছিলেন। ফেরার সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে। কুন্তীদেবীর ছেলে বাবুলালবাবু বলেন, ওরা প্রাতঃক্রিয়া সেরে রাস্তার একেবারে ধার দিয়েই হেঁটে ফিরছিল। কিন্তু একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওদের ধাক্কা মারে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সুযোগটুকুও দেয়নি। ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়।


    মৃত্যুর খবর গ্রামে আসতেই শোকের ছায়া নেমে আসে। কুন্তীদেবীর ছোট ছেলে সুনীল মাহাত বলেন, ১৪৪ বছর পর এসেছে এই পুণ্য যোগ। তা শুনে গ্রামের অনেকের মধ্যেই কুম্ভে যাওয়ার জন্য হিড়িক দেখা যায়। চাকলতোড় থেকে বাস ছাড়া হবে শুনে গ্রামের অনেকের মতো মা ওখানে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। দাদা ও বউদি মাকে নিয়ে যায়। কিন্তু কে জানত, কুম্ভে পৌঁছানোর আগেই মা ও বউদির এভাবে মৃত্যু হবে। জাগরীদেবীর ছেলে তপন মাহাত বলেন, মা ও বাবা কুম্ভে গিয়েছিল। ফোনে নিয়মিত কথাও হচ্ছিল। সকালে শুনি মা আর নেই। 


    মৃত্যুর খবর পেয়েই দেহ গ্রামে ফিরিয়ে আনতে সবরকম চেষ্টা করে পুলিস প্রশাসন। জেলার পুলিস সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, যে অঞ্চলে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানকার থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে দেহগুলি ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পুলিস সূত্রের খবর, এদিন দুপুরে তিনজনের দেহ নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স উত্তরপ্রদেশ থেকে পুরুলিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। ওই গাড়িতেই কুন্তীদেবীর ছেলে, নাতি নাতনি, জাগরীদেবীর স্বামী ফিরছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ বুধবার তিনজনের মৃতদেহ গ্রামে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)