নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: ব্যস্ততার যুগে অনেকেরই রান্নাবান্নার সময় নেই। তাই ফাস্ট ফুডের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। রাস্তার ধারে গজিয়ে উঠছে চাউমিন, মোমো থেকে বিরিয়ানির দোকান। জেলার বহরমপুর শহর থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জেও প্রচুর ফাস্ট ফুডের দোকান রয়েছে। অনেক সময় এসব দোকানের খাবার নিয়ে মানুষের অভিযোগ থাকে। বাসি বা নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার খেলে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা থাকে। তাই এবার মুর্শিদাবাদ জেলায় দুয়ারে খাবারের মান যাচাই চালু করল রাজ্য সরকার।
এই জেলার বাসিন্দাদের ভালো মানের নিরাপদ খাবার পাওয়া নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকারের তরফে একটি ভ্রাম্যমাণ টেস্টিং ল্যাবরেটরি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার জেলার কালেক্টরেট ভবনে সেই ভ্রাম্যমাণ ল্যাবের উদ্বোধন করা হয়। এবার থেকে দোকান বা হোটেলের খাবার-সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ পেলে পৌঁছে যাবে ফুড টেস্টিং ল্যাব। আগামী দিনে কীভাবে নিরাপদ ও ভালো মানের খাবার দেওয়া যাবে, তা নিয়ে এদিন জেলা প্রশাসনিক ভবনে বৈঠক হয়েছে।
জেলাস্তরের অ্যাডভাইসারি কমিটির এই বৈঠকে জেলার খাদ্যসুরক্ষা আধিকারিকরা, পুলিস, ও ডিস্ট্রিক্ট এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের আধিকারিকদের পাশাপাশি শিক্ষাদপ্তরের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। জেলার বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও সেখানে হাজির ছিলেন।
অতিরিক্ত জেলাশাসক(উন্নয়ন) চিরন্তন প্রামাণিক জানান, খাবারের দোকান চালানোর জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফুড লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। কিছু ক্ষেত্রে বিজনেস রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। প্রশাসনের তরফে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। সঠিক মানের খাবার বিক্রি করা হচ্ছে কি না, তা দেখতে অভিযান চালানো হয়।
তিনি বলেন, একবছরে আমরা কী করতে পেরেছি, আগামী বছর কী করব, তা নিয়ে এদিন আলোচনা হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে একটি মোবাইল ফুড টেস্টিং ভ্যান পেয়েছি। এখন থেকে কোথাও অভিযোগ পেলেই ভ্রাম্যমাণ ল্যাব নিয়ে সেখানে গিয়ে খাবার পরীক্ষা করা যাবে। এদিন সেই ভ্যান উদ্বোধন করা হল। গতবছর লাইসেন্সের বিষয়ে নজরদারিতে সার্বিকভাবে দেশের মধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলার পারফরম্যান্স এক নম্বরে ছিল। ধারাবাহিকভাবে আমরা দোকানে গিয়ে সচেতন করেছি। লাইসেন্সবিহীন দোকানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। ওই দোকানদারদের কী কী করতে হবে, তা নিয়ে সচেতনও করেছি।
এদিন বৈঠক শেষে ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্সের সাধারণ সম্পাদক কল্যাণ সাহা বলেন, লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন দেওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন দোকানে খাবার সঠিকভাবে তৈরি হচ্ছে কি না, তা দেখভালের জন্য প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। যারা নিয়ম মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষকে সচেতন করার দায়িত্বটা এখন আমাদের সবাইকে নিতে হবে।
মিষ্টি ব্যবসায়ী বৈশালী সাহা বলেন, মিষ্টির গুণমান পরীক্ষা করানোর জন্য স্যাম্পেল কলকাতায় নিয়ে যেতে হতো। এতে অনেক সময় ও টাকা খরচ হতো। এখন এই ভ্রাম্যমাণ ল্যাবের মাধ্যমে বহরমপুরেই পরীক্ষা হলে খুব সুবিধা হবে। ক্রেতাদেরও কোনও মিষ্টি নিয়ে সন্দেহ হলে খুব তাড়াতাড়ি স্যাম্পেল টেস্ট করে নিতে পারবেন। এতে আমাদের দোকানের সুনামও রক্ষা পাবে।