• বঙ্গ কুম্ভের চতুর্দিকে চূড়ান্ত অব্যবস্থা, ভিড় নেই সন্তদের
    বর্তমান | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • দীপন ঘোষাল, রানাঘাট: কল্যাণীর গঙ্গাতীরে আয়োজিত বঙ্গ কুম্ভ মেলার চতুর্দিকে চূড়ান্ত অব্যবস্থার ছবি। মাঝেরচর গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু ঘাটে আয়োজিত বঙ্গ কুম্ভ মেলায় আয়োজন এবারে একেবারেই সাদামাটা। মেলায় যাওয়ার পথ অত্যন্ত খারাপ।মহিলাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত শৌচালয়। নেই পর্যাপ্ত থাকার ব্যবস্থা। এমনকী ন্যূনতম পানীয় জলের বন্দোবস্ত করতেও ব্যর্থ প্রশাসন। আয়োজক রামকৃষ্ণ বেদান্ত মিশনের তরফে এ নিয়ে প্রশাসনের কাছে বার বার আবেদন সত্ত্বেও মেলেনি সাড়া।


    ২০২২ সাল থেকে কল্যাণীর মাঝেরচর এবং হুগলির ত্রিবেণীতে গঙ্গা-সরস্বতীর মিলনস্থলে কুম্ভ মেলার আয়োজন হচ্ছে। চলতি বছর সেই আয়োজনের দ্বায়িত্ব পেয়েছে রামকৃষ্ণ বেদান্ত মিশন। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে বাংলার ‘মিনি কুম্ভ’। ১৩ ফেব্রুয়ারি শাহী স্নান। কিন্তু মিনি কুম্ভ আয়োজনের প্রথম দিনে চোখে পড়ল একাধিক অব্যবস্থা। সেই সঙ্গে সাধুসন্তদের উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি। মাত্র ৪ বছরের মাথাতেই আগ্রহ হারানোর কারণ কী? অনুসন্ধানে উঠে এসেছে একাধিক কারণ। সেই তালিকার প্রথমেই রয়েছে, প্রয়াগরাজে আয়োজিত মহাকুম্ভের ‘ব্র্যান্ডিং’-এর দাপট। ১৪৪ বছর বাদে মহাকুম্ভ— এই প্রচারেই মিনি কুম্ভে নিয়মিত আসা সন্ন্যাসীদের একটি বড় অংশ এবার প্রয়াগমুখী। শেষ পর্যন্ত রামকৃষ্ণ বেদান্ত মিশন আয়োজনের দায়িত্ব নিলেও, তার আগে পর্যন্ত ওই একই কারণে এগিয়ে আসেনি অন্য কোনও সংগঠন। তবে মিনি কুম্ভ সাধুসন্তদের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ, মাঝেরচরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অব্যবস্থার ছবি। বুদ্ধ পার্ক মোড় থেকে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু ঘাট পর্যন্ত অতি খারাপ রাস্তা। প্রতিবছর একই জায়গায় মেলার আয়োজন হলেও সাধুসন্তদের অভিযোগ, নতুন রাস্তা তৈরি অথবা ন্যূনতম সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। সাধুসন্তদেরই অভিযোগ, পানীয় জল চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু কুম্ভ মেলার প্রথমদিন সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলেও, জলের গাড়ি পাঠাতে পারেনি কল্যাণী পুরসভা কিংবা মহকুমা শাসকের দপ্তর। যদিও মহকুমা শাসকের সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল সাধুসন্তদের। এছাড়াও মহিলাদের জন্য শৌচালয় এবং জামাকাপড় পরিবর্তনের পর্যাপ্ত জায়গার অভাব থেকে শুরু করে আগত সাধুসন্ত এবং পুণ্যার্থীদের রাত্রিযাপনের জন্য উপযুক্ত জায়গার চূড়ান্ত অভাব অন্যতম কারণ। গঙ্গায় স্নান করতে নামার বাঁধানো ঘাট পর্যন্ত হয়নি। বেদান্ত মিশনের অনুরোধে কোনওমতে সাদা বালি ফেলে আর বাঁশ দিয়ে কাঁচা পাড়ে কোনওমতে স্নানের অস্থায়ী ঘাট করার কাজ চলছে। 


    বিষয়টি নিয়ে কল্যাণীর মহকুমা শাসক অভিজিৎ সামন্ত বলেন, আমাদের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল, আমরা অনুমতি দিয়েছি। এছাড়া বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, পানীয় জল সহ অন্যান্য চাহিদাও মেটানো হয়েছে।  পুরসভার তরফে পানীয় জলের গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এতদিন বাদেও ন্যূনতম রাস্তার ব্যবস্থা কেন করা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে অবশ্য প্রশাসনের কর্তারা কোনও মন্তব্য করেননি। 


    রামকৃষ্ণ বেদান্ত মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, মিনি কুম্ভে হাজার খানেক সাধুসন্ত আসার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিদিন বেশ কয়েকশো লোকের দু’বেলা খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সীমিত সামর্থ্যেই তাঁরা এবারের মিনি কুম্ভের আয়োজন করছেন বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সন্ন্যাসীরা। রামকৃষ্ণ বেদান্ত মিশনের তরফে স্বামী প্রসাদানন্দ মহারাজ বলেন, এত মানুষ দূর দূরান্ত থেকে আসবেন কোন পথে? সামান্য একটা রাস্তা পর্যন্ত বানিয়ে দেওয়া হয়নি। আমাদের সাধুসন্তদের তো আর বিপুল অর্থবল নেই। আমরা প্রশাসনের দিকেই তাকিয়ে রয়েছি। কিন্তু প্রশাসন কী ব্যবস্থা করছে? বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের একটু উদ্যোগী হওয়া উচিত।
  • Link to this news (বর্তমান)