মৎস্যদপ্তরের উদাসীনতায় ধুঁকছে আউশগ্রামে যমুনাদিঘি পর্যটন কেন্দ্র
বর্তমান | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আউশগ্রাম: চারদিকে আমগাছ। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এখানে রয়েছে। ‘আম্রকুঞ্জ’র মাঝে বসার জায়গা রয়েছে। আশপাশে প্রায় ৩০টি জলাশয়। কোনওটাতে রুই-কাতলা আবার কোথাও মাছের পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। এই জলাশয়ে রয়েছে বোটিংয়ের জায়গা। কিছুটা দূরে চোখ রাখলে দেখা যাবে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির দল উড়ে যাচ্ছে। তারমধ্যে রয়েছে পরিযায়ীরা। অস্ত যাওয়ার আগে সূর্যের লাল আভা ঠিকরে পড়ছে। সেই সময়ই কানে আসবে কলতান। আঁধার নামার পরই এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। তখন জলাশয়ের মাঝে গেস্টহাউসে বসে প্রকৃতির রূপ উপভোগ করা যাবে। এদৃশ্য দেখার জন্য টাকা খরচ করে বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। ঘরের কাছে আউশগ্রামে রয়েছে যমুনাদিঘি। গুসকরা বা মানকর স্টেশন থেকে খুব সহজেই এই জায়গায় পৌঁছনো যায়। তবে এত সম্ভার থাকার পরও মৎস্যদপ্তরের উদাসীনতায় এই পর্যটন কেন্দ্র ধুঁকছে।
বাম জমানায় আউশগ্রামে যমুনাদিঘি তৈরি করা হয়। মূলত মাছ চাষ করে এলাকার বাসিন্দাদের স্বনির্ভর করাই ছিল সরকারের উদ্দেশ্য। তারজন্য প্রায় ৩০টি জলাশয় খনন করা হয়। দেখভালের অভাবে আগের মতো মাছ চাষ হতো না। আগে এখান থেকে মাছের পোনা বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হতো। সেটাও বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে। নিজস্ব তহবিল কমে যাওয়ায় এখানকার অস্থায়ী কর্মীদের প্রায় ১৬ মাস বেতন হয়নি বলে অভিযোগ। এক কর্মী বলেন, অন্য কোথাও কাজ পাচ্ছি না। তাই ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। একদিন বেতন পাব। এই আশাতেই রয়েছি। তবে মৎস্যদপ্তর মনে করলে এই প্রকল্পটিকে নতুনভাবে প্রাণ দিতে পারত। মাছ চাষের পাশাপাশি জলাশয়ের চারপাশ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল। এখানে গেস্টহাউস রয়েছে। পিকনিক করার জন্য ‘আম্রকুঞ্জ’ ভাড়া দেওয়া হয়। কিন্তু প্রচারের অভাবে এখানে পর্যটকরা আসেন না। পর্যটন কেন্দ্রটি জমজমাট থাকলেও নিজস্ব তহবিল বাড়ত। সেটাও হচ্ছে না।
মৎস্য দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, নতুন কয়েকটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এখানকার গেস্টহাউস এখন অনলাইনে বুক করা যায়। আশা করা যায় মৎস্যদপ্তর এই প্রকল্পটি নিয়ে আরও চিন্তাভাবনা করবে। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, যমুনাদিঘি আমাদের জেলার গর্ব। এই প্রকল্পটিকে আরও বেশি করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এখানকার কর্মীরা বলেন, এখন সপ্তাহ শেষে অনেকেই একদিন নির্জনে সময় কাটাতে চান। তাঁদের কাছে যমুনাদিঘি প্রিয় জায়গা হয়ে উঠতে পারে। কলকাতা থেকে আউশগ্রাম হয়ে খুব সহজেই এখানে আসা যায়। সকালে এসে সন্ধ্যায় গন্তব্যে ফিরতেও সমস্যা হবে না। -নিজস্ব চিত্র