সংবাদদাতা, কল্যাণী: টুকলি করার অভিযোগে প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষায় মিনিট ১৫-২০’র জন্য খাতা আটকে রেখেছিলেন পরিদর্শক অধ্যাপিকা। এরপর খাতা ফেরত পেয়ে পরীক্ষা দেওয়া শেষও করেছিলেন এম-টেক প্রথম বর্ষের ছাত্রী। কিন্তু সবাই বাড়ি ফিরে গেলেও, ছাত্রীটি চুপিসারে উঠে যান পাঁচতলার ছাদে। সেখান থেকে মরণঝাঁপ। টুকলির অভিযোগে ‘অপমানিত’ হয়েই কল্যাণীর মোহনপুরের মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (ম্যাকাউট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী সায়নী সেন (২৪) সোমবার সন্ধ্যায় আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হওয়ার পরও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সময় মতো অ্যাম্বুলেন্স না মেলায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন পড়ুয়ারা। দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। ঘণ্টাখানেক পর পুলিসের আশ্বাসে অবরোধ উঠলেও, গভীর রাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে ঘেরাও করে রাখা হয়।
ছাত্রী আত্মহত্যার ঘটনার জেরে মঙ্গলবার আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ম্যাকাউট ক্যাম্পাস। দিনভর বিক্ষোভ-অবস্থান চলে পড়ুয়াদের। অধ্যাপক-অধ্যাপিকা এবং অশিক্ষক কর্মচারীদের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পড়ুয়াদের দাবি ছিল, ঘটনার দায় নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে এবং পদত্যাগ করতে হবে রেজিস্ট্রারকে। বিভিন্ন সেমেস্টারের পরীক্ষা মঙ্গল ও বুধবারের জন্য বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা এই দাবি জানালেও, সায়নীর পরিবার এই বিষয়ে পুলিসের কাছে কোনও অভিযোগ এদিন রাত পর্যন্ত জমা করেনি। ময়নাতদন্তের পর মেয়ের মরদেহ নিয়ে দুর্গাপুর রওনা দিয়েছে সেন পরিবার।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এম-টেক প্রথম বর্ষের ছাত্রী সায়নী স্থানীয় এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে মায়ের সঙ্গে থাকতেন। সোমবার বিকেল ৫টা নাগাদ তাঁর পরীক্ষা শেষ হয়। পরীক্ষা শেষে তাঁকে আর দেখতে পাওয়া যায়নি। সায়নীর সঙ্গে তাঁর মা’ও যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে এসে বিষয়টি জানান। এরপর ক্যাম্পাসের চতুর্দিকে খোঁজাখুঁজি হয়। সেই সময় প্রশাসনিক ভবনের ছাদে গিয়ে দেখা যায়, ওই ছাত্রীর ব্যাগ এবং চশমা পড়ে রয়েছে। সন্দেহ হওয়ায় ভবনের নীচে গিয়েই রক্তাক্ত অবস্থায় মেলে ওই ছাত্রীকে। উদ্ধার করে জাগুলিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা সায়নীকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে পুলিসের অনুমান, ঝাঁপ দিয়েই আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি।
এদিন বিক্ষোভরত ছাত্র-ছাত্রীদের আরও অভিযোগ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। ক্যাম্পাসে ২৪ ঘণ্টা চালক উপস্থিত থাকা আবশ্যিক হলেও সোমবার ঘটনার সময় তাঁকে পাওয়া যায়নি। নিজেদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখিয়ে কয়েকজন ছাত্র কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জি জানান, অ্যাম্বুলেন্সের চাবি দিন। আমরা নিয়ে যাচ্ছি। যদিও তা পাওয়া যায়নি। শেষে একটি টোটোতে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় রক্তাক্ত-জখম সায়নীকে।