• ৩০ মিনিটে ২০ কেজির ছাগল সাবাড় মৈপীঠের ক্ষুধার্ত বাঘের
    বর্তমান | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও সংবাদদাতা, বারুইপুর: মাঝরাত পেরিয়ে ভোর হওয়ার দিকে এগচ্ছে সময়। মৈপীঠে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাঝেমাঝে ভেসে আসছে ছাগলের কাঁপা গলার ডাক। শ্মশানের স্তব্ধতা চারদিকে। হঠাৎ খট করে আওয়াজ। বনকর্মীরা লাফ দিয়ে উঠলেন। কান ফাটানো গর্জন। ঘন অন্ধকার ফালাফালা করে দিল হলুদ রঙের একটি বিদ্যুৎচমক। টর্চের আলো ফেলা হল খাঁচায়। ভিতরে বাঘ। মুখ থেকে রক্ত ঝড়ছে। খাঁচায় রাখা ছাগলের মাংস চিবোচ্ছে। হাড় ভাঙার এরকম কড়মড় শব্দ রাক্ষসের গল্পে সাধারণত শোনা যায়। আধ ঘণ্টার মধ্যে ২০ কেজি ওজনের ছাগলটিকে খেয়ে শেষ করে ফেলে সুন্দরবনের রাজা, জঙ্গলের ত্রাস রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।


    সোমবার সকালে বনদপ্তরের কুইক রেসপন্স টিমের গণেশ শ্যামলকে আক্রমণ করে লুকিয়ে পড়েছিল চাষের খেতে। দিনভর লুকিয়ে থেকে ধরা পড়ল মঙ্গলবার শেষরাতে। স্বস্তির শ্বাস ফেললেন বনকর্মীরা। বিনিদ্র রাত কাটানোর পর অবশেষে শান্তি ফিরল মৈপীঠের নগেনাবাদে। সোমবার বাঘের আক্রমণের পর গ্রামবাসীরা বনকর্মীদের ব্যর্থতার দিকে আঙুল তুলেছিলেন। অনেকেরই বক্তব্য ছিল, ‘বাঘের চালাকি ধরতে পারেনি বনদপ্তর।’ তবে রাতভর অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাঘটিকে খাঁচাবন্দি করতে সক্ষম হলেন বনকর্মীরা। 


    বাঘ লুকিয়েছিল উচ্ছে বাগানে। সোমবার সন্ধ্যায় সে বাগানের দু’প্রান্তে পাতা হয়েছিল খাঁচা। একটিতে মরা ছাগল এবং অন্যটিতে জ্যান্ত পাঠা রাখা হয়েছিল। জালের বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে অপেক্ষা করছিলেন বনকর্মীরা। ঠায় অপেক্ষা বাঘ আসার। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ ছাগলের টোপে খাঁচাবন্দি হয় বাঘটি। এরপর বনকর্মীরা বাঁশে বেঁধে খাঁচা ইঞ্জিন ভ্যানে তোলেন। নিয়ে যাওয়া হয় গঙ্গার ঘাটে। নদীতে বনদপ্তরের লঞ্চ ছিল। তাতে খাঁচা তুলে রওনা দেন আধিকারিকরা। খাঁচায় থেকে থেকেই গর্জন করছিল প্রাণীটি। খিদে মেটেনি ভেবে তাকে কয়েক কেজি মুরগির মাংস দেওয়া হয়। সেটাও নিমেষে শেষ করে ফেলে সে। বন আধিকারিকদের মতে, দু’দিন গ্রামে ঘুরে ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েছিল। খিদের চোটে হিংস্র হয়েও উঠেছিল। সে কারণে সম্ভবত বনকর্মীকে আক্রমণ করে বসেছিল বাঘ।


    মঙ্গলবার লঞ্চে চিকিৎসকরা বাঘের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর জানান, ‘সুস্থ রয়েছে প্রাণীটি। শারীরিক সমস্যা নেই।’ তারপর মৈপীঠের জঙ্গল থেকে প্রায় ৪২ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকার চামটা জঙ্গলে বিকেল নাগাদ ছাড়া হয় তাকে। গ্রামে টানা দু’দিন মানুষ আতঙ্কে থরথর করে কেঁপেছেন। ধরা পড়ার পর হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে গ্রামবাসী। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডিএফও নিশা গোস্বামী বলেন, ‘এটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ বাঘ। ১০ বছরের মতো বয়স হবে। বনকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বাঘটিকে ধরতে আমরা সফল হয়েছি।’ উল্লেখ্য, মাসখানেক আগে মৈপীঠের বৈকন্ঠপুর পঞ্চায়েত এলাকা থেকে একটি বাঘকে বন্দি করা হয়েছিল। তাকে ছাড়া হয়েছিল ৪৬ কিলোমিটার দূরে ঢুলিভাসানী জঙ্গলে। এই বাঘটিকে ছাড়া হল ৪২ কিমি দূরে চামটায়। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)