বাবার কোলে চেপে মাধ্যমিক দিতে এল আড়াই ফুট উচ্চতার তমোশ্রী
বর্তমান | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সংবাদদাতা, কাকদ্বীপ: নামখানার ফ্রেজারগঞ্জের অমরাবতী গ্রামের তমোশ্রী মণ্ডল মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে এল বাবার কোলে চড়ে। তার সিট পড়েছে রাজনগর বিশ্বম্ভর হাই স্কুলে। মেয়ের যাতে অসুবিধা না হয় তার জন্য বাবার সঙ্গে এসেছেন মা-ও। হাঁটাচলা তো দূর, তমোশ্রী ঠিকমত দাঁড়াতে পর্যন্ত পারে না। চিকিৎসার পরিভাষায় তমোশ্রী ১০০ শতাংশ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। ফলে এই ছোট বয়সে তার হাজারো শারীরিক সমস্যা। আর এই ১৬ বছর বয়সেও তার উচ্চতা মাত্র আড়াই ফুট।
মেয়েটির শরীরে হাড়ের বৃদ্ধি হয়নি। ক্যালসিয়াম না থাকার কারণে এ ছাড়াও আরও বহু সমস্যা রয়েছে। কিন্তু সব সমস্যা তুচ্ছ করে তমোশ্রী অবিরাম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আড়াই ফুটের মেয়েটির প্রবল ইচ্ছাশক্তির কাছে সব প্রতিবন্ধকতা, প্রতিকূলতা একপ্রকার হারই মেনে নিয়েছে বলা যায়। মঙ্গলবার ইংরেজি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে মুখে হাসি। বলল ‘টেনশন হচ্ছে একটু। তবে এতবড় পরীক্ষা দিতে পারছি এর আনন্দ যে কি আমিই জানি।’ ও নারায়ণীতলা ধনেশ্বর শিক্ষা সদনের ছাত্রী। বাবা তরুণ মণ্ডল পেশায় রাজমিস্ত্রি। মা গৃহবধূ। ওদের সংসার চলে অভাবকে সঙ্গী করে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে সংসারের পাশে দাঁড়াতে চায় মেয়েটি। লক্ষ্য, উচ্চশিক্ষা। সে মতোই নিরন্তর চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিবন্ধী জীবনের সঙ্গে এক অসম লড়াই।
মা মামনিদেবী বলেন, ‘ছোটবেলায় তো বসতে পর্যন্ত পারত না। এখন বসে কিন্তু কোনওভাবেই দাঁড়াতে পারে না। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকার দিকে ঝোঁক। তাই স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। রোজ কোলে করে স্কুলে নিয়ে যেতাম। বাড়ি নিয়ে আসতাম। সেই মেয়ে মাধ্যমিক দিচ্ছে। এখানেও কোলে করেই নিয়ে এসেছি। ও যতদূর পর্যন্ত পড়ালেখা করতে চায়, করবে। আমরা চেষ্টা করে যাব।’ তমোশ্রীর স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক জয়ন্ত সামন্ত বলেন, ‘ওর প্রবল জেদ। পড়াশোনাতে খুব ভালো। সব শিক্ষক ওর পাশে রয়েছেন। আমাদের সবার বিশ্বাস, তমোশ্রী অনেক দূর পর্যন্ত এগবে। ওর মধ্যে সে দৃঢ়তা চোখে পড়ে।’ নিজস্ব চিত্র