এই সময়, জলপাইগুড়ি: সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করতে সাধারণত বল প্রয়োগ করতে হয় প্রশাসনকে। এত দিন এই ছবি দেখতেই আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু এর ঠিক উল্টো ছবি দেখা গেল জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশন সংলগ্ন স্টেশন বাজারে। উন্নয়নের স্বার্থে নিজেদের খরচে জেসিবি এনে রেলের জমি দখল করে তৈরি হওয়া দোকান ভেঙে সরিয়ে নিলেন ব্যবসায়ীরা।
তাঁদের বক্তব্য, বাজার না সরালে ‘অমৃত ভারত’ প্রকল্পের মাধ্যমে টাউন স্টেশন আধুনিকীকরণ করা সম্ভব নয়। এলাকার উন্নয়ন হলে ব্যবসাও বাড়বে। তাই সরকারি জমিতে থাকা দোকান নিজেরাই সরিয়ে জায়গা ফাঁকা করে দিলেন ব্যবসায়ীরা।
আপাতত স্টেশন বাজারটি রেলের পুকুরের ধারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে স্থায়ী ভাবে জায়গা পেলে সেখানে বসানো হবে। জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনের ঠিক পাশেই রয়েছে স্টেশন বাজার। ১৯৬৮ সাল থেকে রেলের জমিতেই এই বাজার বসে আসছে। প্রথম দিকে বাজারটি ছোটো আকারে থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাজারের আকার বড় হতে থাকে। বর্তমানে প্রায় ১ একর জমির উপরে এই বাজার বসছে।
৬০০–রও বেশি ব্যবসায়ী দৈনিক এই বাজারে ব্যবসা করেন। এই বাজারের সঙ্গে পরোক্ষ ভাবে যুক্ত হলদিবাড়ি, ময়নাগুড়ি, রাজগঞ্জ–সহ একাধিক এলাকার ছোটো ব্যবসায়ীরা। গত বছর ‘অমৃত ভারত’ প্রকল্পে জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশন আধুনিকিকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে রেল।
এর মধ্যে স্টেশনের প্রবেশ ও বাহিরের পথ আলাদা করা হচ্ছে। আধুনিক বিশ্রামাগার তৈরি হচ্ছে। থাকছে ওয়াইফাই পরিষেবা। স্টেশেনের প্ল্যাটফর্ম বাড়ানো হচ্ছে। স্টেশনের পরিকাঠামো সম্প্রসারণ এবং একটি মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরির জন্য বাজারের এই জায়গার প্রয়োজন। এরপর রেলের পক্ষ থেকে স্টেশন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে কথা বলা শুরু হয়। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্তকুমার রায়ও। এরপরই ব্যবসায়ীরা রেলের জায়গা থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
স্টেশন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক যোগীন্দর দাস বলেন, ‘অমৃত ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে জলপাইগুড়ি স্টেশনকে আধুনিক করা হবে। আমরা উন্নয়নের বিপক্ষে নই। তাই উন্নয়নের পক্ষে রেলের ওই জায়গা ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা নিজের খরচেই জেসিবি লাগিয়ে দোকানে ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছেন।’
বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সুকুমার রায় বলেন, ‘আমরা বাজারের দোকান ভেঙে নিয়ে যাচ্ছি। আপাতত অস্থায়ী ভাবেই ব্যবসা চালানো হবে।’ এ প্রসঙ্গে উত্তর–পূর্ব সীমান্ত রেলের মালিগাঁও হেড কোয়ার্টারের সিপিআরও কপিঞ্জলকিশোর শর্মা বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এর আগে কথা হয়েছে। তাঁরা নিজেরাই দোকান সরিয়ে নিচ্ছেন, বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।’