• তৃণমূলনেত্রীর সংগঠনে রদবদলের ইঙ্গিতেই তালিকা তৈরিতে ব্যস্ত বিধায়করা, বাদ পড়বেন কারা?
    প্রতিদিন | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • স্টাফ রিপোর্টার: তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রয়োজনে দলবদলের ইঙ্গিত দিতেই তৃণমূল বিধায়করা নড়েচড়ে বসেছেন। জেলার বিধায়করা প্রায় সকলেই বাজেট অধিবেশনে যোগ দিতে কলকাতায় থাকায় এলাকার নেতাদের সঙ্গে ফোনেই যোগাযোগ রাখছেন। কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলার বিধায়কদের বাড়িতে সোমবার রাত থেকেই নতুন পদ পেতে ইচ্ছুক দলীয় নেতা-নেত্রীরা ভিড় করছেন। আবার যাঁরা ইতিমধ্যে সংগঠনের নানা শাখায় সভাপতি পদে রয়েছেন, তাঁরাও নিজের নিজের বিধায়কের মন বুঝতে ঘন ঘন ফোনে যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু দলীয় পদ তো একটাই, অনেকেই ঘনিষ্ঠ, তাই কাকে বাদ দিয়ে কাকে রাখবেন, সেই নাম চূড়ান্ত করা নিয়ে টানাপোড়েনে ভুগতে শুরু করেছেন তৃণমূল বিধায়করা।

    নেত্রীর বার্তা, প্রতি পদের জন্য তিনটি করে নাম বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কাছে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জমা দিতে হবে বিধায়কদের। বস্তুত সেই কারণে নেত্রীর নির্দেশ মেনে অরূপও সাংগঠনিক এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আরও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। দলীয় বিধায়করাও নানা বিষয় জানতে চেয়ে সবাই দফায় দফায় ফোন করেন অরূপকে। যদিও রুটিন মেনে এদিন আমজনতার সঙ্গে সাক্ষাতে তৃণমূল ভবনেও গিয়েছিলেন বিদ্যুৎমন্ত্রী। এদিকে, তৃণমূলনেত্রীর ঘোষণা হতেই রাতারাতি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন বিধানসভার মোহনপুর ব্লকের সভাপতি হয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক বিক্রম চন্দ্র প্রধান। জেলা তৃণমূল সভাপতি সুজয় হাজরা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই রদবদলের কথা ঘোষণা করেছেন। উল্লেখ্য, এই ব্লকে ২০২০ সাল থেকেই ব্লক সভাপতির সাংগঠনিক দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন মানিক মাইতি।

    ২০২৬ সালে রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে দলীয় সংগঠনকে আরও শক্তিশালী ও মজবুত করার লক্ষ্যে ব্লক পর্যায়ে দলীয় বিধায়কদের নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। প্রয়োজনভিত্তিক রদবদল যে তিনি নিজেই করবেন তাও পরিষদীয় দলের বৈঠকে স্পষ্ট করেছেন মমতা। তৃণমূল সূত্রে খবর, যে সমস্ত কেন্দ্রে দলীয় বিধায়ক নেই সেখানে যিনি ২০২১ সালের ভোটে তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন তিনি অথবা জেলা তৃণমূল সভাপতি তিনটি করে নাম সুপারিশ করতে পারবেন। যদিও এই রদবদল নিয়ে সমস্ত সিদ্ধান্তই যে তিনি নেবেন তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার রাজ্য বাজেট পেশ হওয়ার পর টানা চারদিনের ছুটিতে নিজের কেন্দ্রে ফিরে যাবেন জেলার বিধায়করা। বস্তুত এই টানা ছুটিতে স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে নিজের কেন্দ্রের সাংগঠনিক পদে রদবদলের নাম চূড়ান্ত করবেন বলে ইতিমধ্যে আলোচনা করেছেন বহু বিধায়ক। সূত্রের খবর, বিভিন্ন ব্লকে যুব সভাপতিদের বয়স ৪০ পেরিয়ে যাওয়া এবং নানা অভিযোগ আসায় বদল করার প্রস্তাব উঠেছে।

    উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক তথা পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান সুমন কাঞ্জিলাল বা মাদারিহাটের জয়প্রকাশ টোপ্পো জানিয়েছেন, বাজেটের পরে কেন্দ্রে ফিরে জেলা তৃণমূল সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করেই নাম চূড়ান্ত করা হবে। তবে ফোনে শাখা সংগঠনের অনেকেই যে বিষয়টি জানতে চেয়ে ফোন করেছেন তা স্বীকার করেন সুমন। দক্ষিণবঙ্গের বীরভূমের লাভপুরের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূল কোর কমিটির অন্যতম সদস্য অভিজিৎ সিং (রানা) স্বীকার করেন, দলের যে সমস্ত ব্লক সুসংগঠিত, লোকসভা- বিধানসভা ভোটে ভালো ফল করেছে এবং বিধায়কের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে সভাপতিরা উন্নয়নের কাজ করছেন, মানুষকে পরিষেবা দিচ্ছেন, সেখানে বদল করার প্রয়োজন নেই। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী অবশ্য বলেছেন, “দলে নবীন ও প্রবীণ প্রজন্ম, সবাইকে নিয়েই চলতে বলেছেন নেত্রী। হলদিয়া ও মহিষাদল, দুই ব্লকের বুথ পর্যায়ের সবার সঙ্গেই সুসম্পর্ক। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই তালিকা জমা দেব।” তাৎপর্যপূর্ণ হল, তৃণমূল কংগ্রেসের আঁতুড়ঘর দক্ষিণ কলকাতায় ৮৪টি ওয়ার্ডের একজনও কেউ ফোন করে জানতে চাননি বলে দাবি করেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি বিধায়ক দেবাশিস কুমার। তাঁর কথায়, “দক্ষিণ কলকাতায় প্রতিটি বুথ ও পাড়ার অধিকাংশ কর্মীদেরও চেনেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তিনিই এখানে সব ঠিক করেন। তাই কোনও ওয়ার্ড বা কোনও শাখা সংগঠনের রদবদল নিয়ে কোনও উত্তাপ নেই।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)