মাঘী পূর্নিমায় পুণ্যস্নান করতে ত্রিবেণীতে রেকর্ড ভিড়, অসুস্থ এক পুণ্যার্থী...
আজকাল | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মিল্টন সেন: মাঘী পূর্ণিমায় ত্রিবেণী কুম্ভে পুণ্যস্নান করতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম। ভোর রাত থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পুণ্যার্থীদের ভিড় উপচে পড়েছে ত্রিবেণীতে। মূলত যে সমস্ত পুণ্যার্থীরা প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে যেতে পারেননি বা গিয়েও ফিরে এসেছেন, এদিন তাঁরাই ত্রিবেনী কুম্ভে পূণ্যস্নান করেন। বেলা বাড়তেই পুণ্যার্থীদের ভিড় উপচে পরে। ভিড় সামাল দিতে আগে থেকেই সেখানে মোতায়েন করা ছিল পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবক। পাশাপশি টিউব এবং লাইফ জ্যাকেট নিয়ে গঙ্গাবক্ষে স্পিড বোটে নজরদারি চালাচ্ছিল বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা। নজর ছিল স্নানের ঘাটগুলির দিকেও। স্নান করতে নেমে যাতে কেউ তলিয়ে না যায় তাই আগে থেকেই গঙ্গার ঘাট ঘিরে দেওয়া হয়েছিল জাল দিয়ে। একসঙ্গে পুণ্যার্থীরা যাতে ঘাটে না নেমে পরেন, তাই ঘাটে প্রবেশের মুখে বাঁশের গেট করা হয়।
বুধবার সকাল থেকেই ত্রিবেণী সপ্তর্ষি ঘাটে শুরু হয়ে যায় পূণ্যস্নান। স্নান চলাকালীন এদিন হঠাৎ করে ঘাটে সংজ্ঞা হারান এক পুণ্যার্থী। সঙ্গে সঙ্গেই স্বেচ্ছাসেবীরা তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে বাঁশবেড়িয়া পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া থেকে আসা ওই ব্যক্তির নাম নিখিল সরকার (৫৩)। তিনি ও তাঁর পরিবারের চার সদস্যের সঙ্গে পুণ্যস্নান করতে এসেছিলেন।
সাতশ বছরের ইতিহাসের হাত ধরে ফিরে এসেছে ত্রিবেনী কুম্ভমেলা। প্রয়াগরাজে যেমন গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর সঙ্গম। ঠিক তেমনই ত্রিবেণীতেও রয়েছে তিন নদীর সঙ্গম। প্রয়াগ হল যুক্তবেনী। ত্রিবেনীকে বলা হয় মুক্তবেনী। একইসঙ্গে ত্রিবেণীকে দক্ষিণপ্রয়াগও বলা হয়ে থাকে। ইতিহাস অনুযায়ী ৭০০ বছর আগে ওখানে কুম্ভের মেলা হত। মকরস্নান করে গঙ্গাসাগর থেকে ফেরার পথে সাধু-সন্তরা ত্রিবেণীতে বিশ্রাম নিতেন। মাঘ সংক্রান্তিতে ত্রিবেণী হয়ে উঠত মিনি কুম্ভ। কানাডিয়ান লেখক এলান মরিনিসের একটি বই থেকে ত্রিবেণী কুম্ভের কথা জানা যায়। এছাড়া পুরানেও ত্রিবেণীর নাম পাওয়া গেছে। স্কন্ধপুরান অনুযায়ী, কুশদ্বীপের রাজা প্রিয়বন্ত'র মোট সাতজন পুত্র ছিলেন। তাঁরা হলেন অগ্নিত্র, মেধাতিথি, বপুস্মান, জ্যোতিষ্মান, দ্যূতিষ্মান, সবন ও ভব্য। ত্রিবেণী ধাম সংলগ্ন সাতটি গ্রামে তাঁরা সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। যেগুলি হল, বাসুদেবপুর, বাঁশবেড়িয়া, নিত্যানন্দপুর, কৃষ্ণপুর, দেবানন্দপুর, শিবপুর ও বলদঘাটি। ওই গ্রামগুলিতে আশ্রম তৈরি করেছিলেন। তাই এই জায়গার নাম হয় সপ্তগ্রাম। সেই সপ্তগ্রাম বাণিজ্যবন্দর থাকাকালীন এই স্থানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। যদিও পরবর্তীকালে বিদেশি আক্রমণে ওই জায়গার মাহাত্ম্য কমে অনেকটাই। কিন্তু মাঘ সংক্রান্তির দিন বহু মানুষ ত্রিবেণীতে স্নান করতেন। সেই সূত্র ধরেই ত্রিবেণীতে অনুকুম্ভের জন্ম হয়। দুরদূরান্ত থেকে আসা নাগা সাধুসন্ন্যাসীদের উপস্থিতি ত্রিবেণী কুম্ভকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এদিন সকালে প্রথমে হয় সাধুদের নগর পরিক্রমা। তারপর গঙ্গার ঘাটে হয় পুণ্যস্নান।