দাদা ঠাকুরের শহরে অনুষ্ঠিত হয় রাজ্যের সবথেকে প্রাচীন বইমেলা, জানতেন কি?...
আজকাল | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: জঙ্গিপুর শহরের নাম বললেই দেশ তথা রাজ্যবাসীর চোখের সামনে ভেসে ওঠে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এবং দাদাঠাকুর শরৎচন্দ্র পণ্ডিতের চেহারা। কিন্তু অনেকেরই হয়ত অজানা যে শহরে বসে ‘বিদূষকে’র মতো ব্যাঙ্গাত্মক পত্রিকা কিংবা ‘বোতল পুরাণে’র বোতলের আকারে আশ্চর্য কবিতার পত্রিকা প্রকাশ করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন শরৎচন্দ্র পণ্ডিত। সেই শহরেই প্রথম বসেছিল পশ্চিমবঙ্গের প্রথম ‘গ্রন্থমেলা’ বা বইমেলা।
কলকাতা বইমেলা শুরু হওয়ার প্রায় ১২ বছর আগে ১৯৬৩ সালে শুরু হওয়া জঙ্গিপুর গ্রন্থমেলা প্রথম কয়েক বছর পথ চলার পর বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে যায়। তবে গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের উদ্যোগে নিয়মিত প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজ্যের প্রাচীনতম এই গ্রন্থমেলা বা বইমেলা। আগামী একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিন রঘুনাথগঞ্জের ম্যাকেঞ্জি ময়দানে শুরু হতে চলেছে এবছরের জঙ্গিপুর বইমেলা। যাকে ঘিরে এখন শহরে সাজসাজ রব।
জঙ্গিপুর বইমেলার যুগ্ম আহ্বায়ক বিকাশ নন্দ বলেন, ‘জঙ্গিপুর বইমেলা শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম বইমেলা নয়, এই বইমেলা ভারতবর্ষের সবথেকে পুরনো ‘গ্রন্থমেলা’।’ তিনি বলেন, ‘১৯৬৩ সালে দাদা ঠাকুরের শহর রঘুনাথগঞ্জের ম্যাকেঞ্জি ময়দানে এই বইমেলা পথচলা শুরু করে। প্রথমে এই বইমেলার নাম ছিল ‘গ্রন্থমেলা’। তবে পরবর্তীকালে এই মেলা ‘জঙ্গিপুর বইমেলা’ নামে পরিচিতি লাভ করে।’ বিকাশবাবু বলেন, ‘বইমেলা শুরুর কয়েক বছর পর বিভিন্ন কারণে উদ্যোক্তারা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। ২০০৫ সালে মুর্শিদাবাদ জেলা বইমেলা জঙ্গিপুর শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তার পর থেকে এই বইমেলা একটানা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে করোনাকালে কয়েক বছর এই বইমেলা বন্ধ ছিল।’ রাজ্যের প্রাচীনতম এই বইমেলার অপর এক আহ্বায়ক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘এবছরের বইমেলায় প্রায় ১৬৫টি স্টল থাকছে। তার মধ্যে ১০০–র বেশি স্টল শুধুমাত্র বিভিন্ন প্রকাশকের জন্য বরাদ্দ। রাজ্যের প্রাচীনতম এই বইমেলায় অংশগ্রহণ করার জন্য ইতিমধ্যে কলকাতা, বহরমপুর ,শান্তিনিকেতন সহ আরও নানা জেলা থেকে বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থা নিজেদের স্টল বুক করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্মের যুব সমাজের মধ্যে মোবাইল ফোনের আসক্তি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। তাদের বইমুখী করার লক্ষ্য নিয়ে জঙ্গিপুরবাসীর তরফ থেকে আমরা এই বইমেলা করার উদ্যোগ নিচ্ছি। ২১ তারিখ বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বিধায়ক জাকির হোসেন, সাংসদ খলিলুর রহমান সহ শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।’ আহ্বায়ক জানান, ‘ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে জানা যায় ১৯৬৩ সালের এপ্রিল মাসে জঙ্গিপুরে সাত দিনের জন্য ‘গ্রন্থমেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই বইমেলায় কানু বন্দ্যোপাধ্যায়, কবিয়াল গুমানি দেওয়ান, বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়ের মত বিশিষ্টরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। এবছরের বইমেলাতেও আমরা দাদা ঠাকুর শরৎচন্দ্র পণ্ডিত, গুমানি দেওয়ান সহ জেলার আরও সম্মানীয় ব্যক্তিদের স্মরণ করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার ব্যবস্থা রেখেছি।’