• নারী-পুরুষে ভেদাভেদ নয়! ছক ভেঙে ধুমধাম করে কন্যের পৈতে মালদহে
    প্রতিদিন | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • বাবুল হক, মালদহ: ন’বছরের কন্যের পৈতে! তাতে বাধা কেন? সমাজের চিরাচরিত ছক ভেঙে মেয়েদেরও উঁচু জায়গায় বসানোর বার্তা দিতে বাড়ির ছোট কন্যের উপনয়ন করে অন্তত নজির গড়লেন মালদহের ইংলিশবাজার শহরের ঘোড়াপীরের এলাকার সিদ্ধান্ত পরিবার।

    ছেলেদের উপনয়ন তথা পৈতে হলে মেয়েদের নয় কেন! এমন প্রশ্নেই এগিয়ে আসেন ন’বছরের মধুপর্ণা সিদ্ধান্তর বাবা-মা। তাঁদের দাবি, শুধু মালদহেই নয়, মেয়েদের এই পৈতের ঘটনা উত্তরবঙ্গেও প্রথম। ভারতীয় সমাজে ব্রহ্মচর্য অতি প্রাচীন রীতি। হিন্দুধর্মের আচারে উপনয়নের মাধ্যমে ব্রহ্মচর্য পালনের রেওয়াজ রয়েছে এখনও। অনেকেই বলেন, ব্রাহ্মণ পরিবারের পুরুষ সন্তানরাই পৈতের মাধ্যমে দীক্ষা গ্রহণ করে। মালদহে দীক্ষা গ্রহণ করল এক কন্যা।

    মধুপর্ণা মালদহ শহরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। বাবা মনোজকুমার সিদ্ধান্ত একজন ব্যবসায়ী। মা পায়েল সিদ্ধান্ত গৃহবধূ। দুই বোনের মধ্যে মধুপর্ণা ছোট। ওর দিদি মধুশ্রী কলকাতায় পড়াশোনা করে। মনোজবাবু বলেন, “আমার দু’টো মধুপর্ণা সিদ্ধান্ত। মেয়ে হওয়ার পর অনেকেই বলেছেন, ‘মেয়ে হওয়া ঠিক নয়’। আমি সমাজের এই চিন্তাধারা বদলানোর জন্যই এটা করেছি। মেয়ের পৈতে দিয়েছি।” তাঁর দাবি, “আগে মেয়েদের পৈতে হত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মেয়েদের দমন করার জন্যই হোক বা অন্য কোনও কারণেই হোক, মেয়েদের পৈতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমি মানুষের এই চিন্তাধারা বদল করতে চাইছি।” ছোট মেয়ের উপনয়নেই ক্ষান্ত হননি তিনি।

    সিদ্ধান্ত পরিবারের কর্তা বলেন, “ভেবেছিলাম, দুই মেয়ের পৈতেই একসঙ্গে দেব। কিন্তু বড় মেয়ে লজ্জা পাচ্ছে। বড় হয়ে গিয়েছে। তাই ছোট মেয়ের পৈতে দিয়েছি। এই সমাজের কাছে আমার বার্তা, ছেলে আর মেয়ে, দু’টোই সমান।” পায়েলদেবী বলেন, “মেয়ে এখন ছোট। পৈতের সঠিক অর্থ জানে না। তবে দীক্ষা সম্পর্কে ওর সাত বছর বয়স থেকেই অভিজ্ঞতা রয়েছে।” পায়েলদেবীর দাবি, “বৈদিক যুগে ছেলে ও মেয়ে দু’জনেরই পৈতে হত। মেয়েদের দমিয়ে রাখতে একসময় তাদের পড়াশোনা, পৈতে, বাইরে বেরনো বন্ধ করা হয়েছিল।” আর মধুপর্ণা? তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীর কথায়, “পড়াশোনা ইংরেজি মাধ্যমে করছি। তবে সংস্কৃত মন্ত্রে পুজো করতে পারব। শিখে নেব। বাড়িতে অনুষ্ঠান হয়েছে, পুজো হয়েছে, যজ্ঞ হয়েছে। বন্ধুরা এসেছিল। আনন্দ করেছি।”

    সিদ্ধান্ত পরিবারের পুরোহিত সদানন্দ বাগচি বলেন, “ব্রাহ্মণের ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন করা আবশ্যিক। বৈদিক যুগে নারী ও পুরুষের কোনও ভেদাভেদ ছিল না। প্রত্যেকেই ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন করার অধিকারী ছিলেন।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)