• রাজ্যের বাজেটে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি, বাড়ল ৪ শতাংশ ডিএ
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • বুধবার বিধানসভায় পেশ করা হল রাজ্য বাজেট। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে এটাই শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। বহু চর্চিত এই বাজেটে বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হল। রাজ্যের মানুষের দাবির শীর্ষে থাকা বেশ কয়েকটি প্রকল্পে এই বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। রাজ্যের সরকারি কর্মী ও পেনশনভোগীদের ডিএ বৃদ্ধি থেকে শুরু করে বাংলার বাড়ি, গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণ, সুফল বাংলা, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান, গঙ্গাসাগর সেতু নির্মাণ সহ একাধিক প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মোবাইল ফোন প্রদান ও ‘নদী বন্ধন’ প্রকল্প নামে একটি নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব আনা হয়েছে বাজেটে।

    এদিন রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এই পূর্ণাঙ্গ বাজেটটি পেশ করেন। ২০২৬ বিধানসভা ভোটের ঠিক এক বছর আগে এই বাজেট পেশকে কার্যত মমতার মাস্টারস্ট্রোক বলে দাবি করেছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল। চন্দ্রিমা বাজেট পেশের সময় কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়েও সরব হন রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী। তবে এবারের বাজেটে লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে নতুন করে কোনও ঘোষণা করা হয়নি। তৃণমূল সূত্রের খবর, ২০২৬-এর নির্বাচনের আগে এই প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে। বাড়তে পারে ভাতার পরিমাণ।

    প্রসঙ্গত গত দুইবছর ধরে রাজ্যের সরকারি কর্মীরা ডিএ বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। বর্তমানে তাঁরা ১৪ শতাংশ করে ডিএ পাচ্ছেন। বুধবারের বাজেটে আরও ৪ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে এবার থেকে সরকারি কর্মীরা মোট ১৮ শতাংশ করে ডিএ পাবেন। এই বর্ধিত ডিএ প্রাপকদের তালিকায় রয়েছেন সরকারি ও আধা সরকারি কর্মী, শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীরাও। এমনকি রাজ্য সরকারের পেনশন ভোগীরাও এই ডিএ -র বর্ধিত অংশ পাবেন বলে বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে। যা আগামী ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হতে চলেছে।

    এদিকে বাংলার বাড়ি প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। ফলে রাজ্যের প্রায় ১৬ লক্ষ গরিব উপভোক্তা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। সেজন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে এই প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা উপভোক্তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢুকবে বলে জানানো হয়েছে।

    রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রাম ও শহরে কর্মরত আশা কর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মধ্যে কাজের সুবিধার্থে একটি স্মার্ট ফোন দেওয়ার পরিকল্পনা করে আসছিল রাজ্য সরকার। এবার সেটা বাস্তবায়িত হতে চলেছে। এই বাজেটে ৭০ হাজার কর্মীকে স্মার্ট ফোন দেওয়া হবে। সেজন্য এই প্রকল্পে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বাজেটে।

    গ্রামীণ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণে বরাদ্দ করা হয়েছে ১৫০০ কোটি টাকা। যার মাধ্যমে প্রায় ৩৭ হাজার কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার ও নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হবে। সেই সঙ্গে ‘নদী বন্ধন’ প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের নদীগুলির সংযুক্তিকরণ করে একদিকে জলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন বাড়ানো হবে, তেমনি নদীগুলির সংস্কার ও ভৌগোলিক পরিবেশও উন্নত হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারনা। এই প্রকল্পে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে।

    রাজ্যে এই মুহূর্তে প্রায় ৬০০ বেশির সুফল বাংলা স্টল রয়েছে। এর মধ্যে ভ্রাম্যমান স্টলগুলি চালানোর জন্য ১১৭টি গাড়ি রয়েছে। রাজ্য সরকারের চলতি বাজেটে এই প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়িয়ে স্টলের সংখ্যা আরও অনেকটাই বাড়ানো হচ্ছে। বাজেটের ঘোষণা অনুযায়ী, রাজ্যে আরও ৩৫০টি সুফল বাংলা স্টল চালু করা হবে। যার ফলে একদিকে রাজ্যের আরও ব্যবসায়িক শ্রীবৃদ্ধি হওয়ার যেমন সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি কৃষি উৎপাদনও বাজারজাত হওয়ার সুযোগ তৈরি হতে চলেছে।

    অন্যদিকে অভিনেতা ও সাংসদ দেবের লোকসভা কেন্দ্রের বহু আলোচিত ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ নিয়ে দরাজ হস্ত হল রাজ্য সরকার। প্রায় ১৫০০ কোটির এই প্রকল্পে চলতি বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজ্য সরকার এই প্রকল্প আগামী দুই বছরের মধ্যে সমাপ্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। পাশাপাশি, গঙ্গাসাগর সেতু প্রকল্পেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

    এছাড়া ৪৪ হাজার কোটি টাকা গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েতে, বিদ্যালয় শিক্ষায় ৪১ হাজার কোটি, স্বাস্থ্যে ২১ হাজার ৩৫৫ কোটি, ধান ক্রয়ের নতুন কেন্দ্র তৈরির জন্য বরাদ্দ আরও ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এই বাজেটে। উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য আগামী অর্থবর্ষে ৬,৫৯৩.৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রেখেছেন চন্দ্রিমা।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)