রাস্তার পাশে সাধারণ একটা চায়ের দোকানে বসে আছেন দেশের রাষ্ট্রপতি! তাঁর পাশে নেই কোনও নিরাপত্তা রক্ষী। হঠাৎ করেই এই রকম দৃশ্য দেখলে অবাক হবেন সবাই। একই রকমভাবে অবাক হয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার বাসিন্দারাও। বাস ধরতে এসে তাঁরা দেখেন রাস্তার পাশে একটি দোকানে মাটির ভাঁড়ে চায়ে চুমুক দিচ্ছেন দেশের রাষ্ট্রপতি। এই দৃশ্য দেখেই চমকে ওঠেন তাঁরা। তার পরেই তাঁদের নজরে পড়ে সেখানে নেই কোনও নিরাপত্তা কর্মী। নেই রাষ্ট্রপতির গাড়িও। তখন সবাই ভাবতে থাকেন, তাহলে ব্যাপারখানা কী? তার পরেই অবশ্য জানা যায় যে মহিলাকে তাঁরা রাষ্ট্রপতি বলে মনে করেছিলেন তিনি আসলে কে।
বুধবার সকালে ডেবরা বাজারে বাস ধরতে এসেছিলেন অনেকেই। চারদিকে কুয়াশা। তারই মধ্যে সেখানের লোকজন দেখেন ডেবরা বাজারে ফ্লাইওভারের নিচে, একটি বেঞ্চে বসে চা খাচ্ছেন এক মহিলা। এক ঝলক দেখে তাঁকে সবাই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বলে মনে করেন। সামনে রাষ্ট্রপতি বসে আছেন ভেবে সবাই চমকে যান। তাঁরা দু-তিনবার করে নিজেদের চোখ কচলেও নেন। তার পরে আশেপাশে কোনও নিরাপত্তা কর্মী নেই দেখে সাহস করে তাঁর দিকে এগিয়েও যান।
তখনই ভুল ভাঙতে শুরু করে তাঁদের। তাঁরা বুঝতে পারেন, চোখের সামনে যাকে দেখছেন তিনি আসল রাষ্ট্রপতি নন। তবে ঠিক যেন দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তাঁর চোখে গোল ফ্রেমের চশমা, পরনে গোলাপী পাড়, হালকা সবুজ তাঁতের শাড়ি। তাঁর হাতে একটা ছোট ব্যাগও ছিল।
উৎসুক জনতা এরপর ভদ্রমহিলার সাথে কথা বলা শুরু করেন। তাঁরা জানতে পারেন, বছর ৬৫-র ওই মহিলার নাম গীতা শাসমল। তাঁর বাড়ি ডেবরা ব্লকেরই শ্যামসুন্দরপুর এলাকায় । তাঁর ছেলে একজন বাসকর্মী। বাপের বাড়ি যাবেন বলে বুধবার সকালে তিনি বাস ধরার জন্যই এসেছিলেন। বাস আসার আগে, এক কাপ চা খাওয়ার জন্য তিনি বসেছিলেন একটি বেঞ্চে। তখনই তাঁকে ঘিরে ধরেন উৎসুক জনতা। তা দেখে কিছুটা অবাকই হন গ্রামের এই নিতান্ত সহজসরল মহিলা। কেন এত ভিড় তা জানতে চান তিনি।
তখন মোবাইল ফোন বের করে গীতা শাসমলকে দেখানো হয়, তাঁকে দেখতে হুবহু দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর মতো! তা শুনেই হেসে ফেলেন তিনি। গীতা বলেন, ‘ দেশের রাষ্ট্রপতির কথা শুনেছিলাম। এর আগে কোনও দিনই তাঁর ছবি দেখিনি । তিনি আমার মতোই দেখতে তাও জানতাম না। আমি গ্রামের একজন সাধারণ মহিলা।’ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁর কোনও দিন দেখা হবে কী না তাও জানেন না তিনি। তবে, রাষ্ট্রপতির মতোই দেখতে এলাকারই একজনকে পেয়ে খুশি ডেবরার বাসিন্দারা। বাস ধরতে যাওয়ার আগে তাঁরা তাঁকে দই-মিষ্টি-ও খাওয়ান।