রাজদীপ গোস্বামী, মেদিনীপুর: বুধবার গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর রথযাত্রায় মানুষের ঢল নামল। ডেবরা থানার লোয়াদা গ্রামে রথযাত্রা ও মেলায় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ শামিল হন। ৭১তম বর্ষে রথযাত্রা ও মেলার পাশাপাশি নাম সংকীর্তনের আয়োজন করা হয়। একইসঙ্গে মেলা কমিটির উদ্যোগে হওয়া বিভিন্ন সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে উঠবেন এলাকার মানুষ। লোয়াদা দেশ কমিটির সদস্যদের কথায়, এবছর নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য প্রসাদের ব্যবস্থা থাকছে। রথযাত্রা শুরুর ন’দিনের মাথায় উল্টো রথেও রেকর্ড ভিড় হবে আশা করছেন উদ্যোক্তারা। মেলায় বেচাকেনার পরিমাণও বাড়বে।
প্রতিবছর নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে মাঘী পূর্ণিমার দিন এই রথযাত্রা হয়ে আসছে। লোয়াদা দেশ কমিটির সভাপতি হরিপদ দে বলেন, মেলায় আসার জন্য সাধারণ মানুষকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এবছর ভিড়ের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে যাবে বলে আশা রাখি। সকল সদস্য ও পুলিস-প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এত বড় মাপের মেলার আয়োজন করা সম্ভব হতো না। প্রসঙ্গত, এই রথযাত্রার ইতিহাস প্রায় ৪০০ বছরের পুরানো। দিনে দিনে রথযাত্রার জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে।
জানা গিয়েছে, এই রথযাত্রায় থাকেন চৈতন্য মহাপ্রভু, প্রভু নিত্যানন্দ ও অদ্বৈত প্রভু। একসময় নবদ্বীপের কয়েকজন মহাপ্রভুর ভক্ত লোয়াদা গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় এসেছিলেন। তাঁরা একত্রে চৈতন্য মহাপ্রভুর নিমকাঠের বিগ্রহ তৈরি করেন। এরপর লোয়াদা গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় শুরু হয় সংকীর্তন। সংকীর্তন শেষে তাঁরা বিগ্রহ তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁরা বিগ্রহ নিয়ে যেতে পারেননি। এরপর গ্রামের ভক্তরা বারবার চেষ্টা করেও বিগ্রহ নিয়ে যেতে পারেননি। অবশেষে ওখানেই মহাপ্রভুকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর লোয়াদা গ্রামে মন্দির তৈরি হয়। শুরু হয় মহাপ্রভুর সেবা। জনশ্রুতি, ওই এলাকার মানুষ একসময় কংসাবতী নদী থেকে কাঠ সংগ্রহ করতেন। সেই নদীর জলেই নিমকাঠ ভেসে আসে। সেবাইতদের ইচ্ছে অনুসারে নিত্যানন্দ ও অদ্বৈত প্রভুর বিগ্রহ তৈরি হয়। মানুষের দাবি মেনে মহাপ্রভুর পাশে ওই দুই বিগ্রহ স্থান পেয়েছিল। সেই সময় থেকেই রথযাত্রা শুরু হয়। তবে বেশ কয়েকবছর চলার পর রথটি ভেঙে যায়। সেজন্য রথযাত্রা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, ৭১ বছর আগে স্থানীয় যুবকরা নিজেদের উদ্যোগে একটি রথ তৈরি করেন। তৎকালীন সময়ে রথ তৈরির জন্য অর্থ সাহায্য করেছিলেন স্থানীয় বিপিন দাস। বিপিনবাবু নিজের উদ্যোগে মাঘী পূর্ণিমা থেকে নিজের বাড়িতেই মহাপ্রভুকে রেখে সেবা করেন। ন’দিন মহাপ্রভু তাঁর বাড়িতেই ছিলেন। বর্তমানে তাঁর জায়গায় দায়িত্ব নিয়েছেন প্রয়াত তপনকুমার দের পরিবার। তাঁদের বাড়িতে ন’দিন থাকার পর মন্দিরে ফিরবেন চৈতন্য মহাপ্রভু, প্রভু নিত্যানন্দ ও অদ্বৈত প্রভু। বর্তমানে মহাপ্রভুর সেবা করেন পল্টু তলোয়ার। পল্টুবাবু বলেন, নিষ্ঠা সহকারে ও রীতি মেনেই রথযাত্রার অনুষ্ঠান হচ্ছে। এছাড়া তাঁদের নিত্যসেবা করা হয়। লোয়াদা দেশ কমিটির সম্পাদক বিনয়কৃষ্ণ মণি বলেন, সারা বছরই মানবসেবায় রত থাকেন কমিটির সদস্যরা।