ব্যবসায়ীকে না পসন্দ, রেজিস্ট্রি ম্যারেজের পরদিন প্রেমিকের সঙ্গে মন্দিরে বিয়ে ছাত্রীর
বর্তমান | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: পরিবারের দেখাশোনা করা পাত্রকে রেজিস্ট্রি বিয়ের পরদিনই প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধল কলেজ ছাত্রী। মন্দিরে প্রেমিকের হাতে সিঁদুর পরে তাঁর বাড়িতে যাওয়ার পথে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ালেন যুবতীর বাবা-মা। রাস্তাতেই ওই যুবতীকে নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ভূপতিনগর থানার মাধাখালি বাজারে এই ঘটনায় ব্যাপক হইচই পড়ে যায়। স্থানীয়রা থানায় ফোন করার পর পুলিস ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ওই যুবতী ও তাঁর প্রেমিককে থানায় আনা হয়। দু’জইে মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর কলেজের পড়ুয়া। প্রেমিক আবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা। পুলিসের কাছে ওই যুবতী জানান, বাবা-মায়ের ঠিক করা পাত্রকে তাঁর পছন্দ নয়। জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই নিজের পছন্দ করা ছেলেকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চান।
জানা গিয়েছে, ওই কলেজ ছাত্রীর বাড়ি ভূপতিনগর থানার রাধাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উড়উড়ি গ্রামে। তিনি মুগবেড়িয়া কলেজে ফার্স্ট সেমেস্টারে পড়াশোনা করেন। পরিবারের লোকজন ভগবানপুর থানার মহম্মদপুর গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক করেন। গোয়ালাপুকুরে সরকারি মার্কেট কমপ্লেক্সে ওই যুবকের দোকান রয়েছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি ভগবানপুরের ম্যারেজ রেজিস্ট্রার অশোককুমার মণ্ডল মহম্মদপুর গ্রামে ওই যুবকের সঙ্গে ওই কলেজ ছাত্রীর রেজিস্ট্রি ম্যারেজ সম্পন্ন করেন।
রেজিস্ট্রি বিয়ের পরদিনই ওই ছাত্রী নিজের পছন্দের ছেলের সঙ্গে সংসার করার স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ভূপতিনগর থানার অর্জুননগর গ্রাম পঞ্চায়েতের পুরুলিয়া গ্রামে ওই যুবকের বাড়ি। তিনি মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর কলেজে পড়াশোনা করেন। তিনি কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা। মঙ্গলবার দু’জনে স্থানীয় রঘুনাথপুর গ্রামের মন্দিরে বিয়ে সারেন। ওই কলেজছাত্রী বাড়ি থেকে বেরনোর পরই তাঁর খোঁজে পরিবারের লোকজনও বেরিয়ে পড়েন। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর সন্ধ্যা নাগাদ মাধাখালি বাজারে তাঁরা দু’জনকে দেখতে পান। সিঁদুর রাঙানো কপাল দেখে বাড়ির লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। তাঁরা জোর করে মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে যুবতী প্রেমিকের এক হাত টিপে ধরে রাখে। বাস্তবের মাটিতে তখন রুপোলি পর্দার টান টান রোমান্টিক দৃশ্য। যুবতীর জেদ দেখে বাড়ির লোকজন মারধরও করেন।
প্রকাশ্য রাস্তায় এরকম ঘটনায় স্থানীয়রা হস্তক্ষেপ করেন। তাঁরা থানায় ফোন করে পুলিস ডাকেন। ভূপতিনগর থানার সাব ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয়পক্ষকে থানায় নিয়ে আসেন। খবর পেয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতৃত্ব, ভগবানপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি কর্মাধ্যক্ষ উজ্জ্বল প্রধান, অর্জুননগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অরুণ মাইতি থানায় হাজির হন।
এদিকে, প্রেমিকের বাবা থানায় দাঁড়িয়ে ছেলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন। তিনি এই বিয়ে মানবেন না বলেও সরাসরি জানিয়ে দেন। এনিয়ে অনেক রাত পর্যন্ত থানায় টানাপোড়েন চলতে থাকে। শেষমেশ যুবক ও যুবতী নিজেদের ইচ্ছায় বিয়ে করেছেন বলে মুচলেকা দিয়ে রাতে থানা থেকে বেরিয়ে যান।
অর্জুননগর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান অরুণ মাইতি বলেন, ওই যুবতীর পরিবার তাঁর অমতে জোর করে রেজিস্ট্রি বিয়ে দিয়েছিল। বাড়ির ঠিক করা পাত্রকে ফোন করে নিজের পছন্দের ছেলে থাকার কথা জানিয়েও ছিল। তারপরও জোর করে বিয়ে দেওয়ায় ওই কলেজছাত্রী বাড়ি ছেড়ে নিজের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেছেন।