• গঙ্গাকে দূষণমুক্ত রাখার আবেদন নিয়ে বছরভর সাইকেলে ঘুরে প্রচার, ক্লান্তি নেই ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধের
    বর্তমান | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সুকান্ত বসু, কলকাতা: গঙ্গা দূষণমুক্ত রাখতে এবং শহরের খালগুলি নিয়মিত পরিষ্কার রাখার বার্তা দিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা সাইকেলে শহর চষে বেড়ান বৃদ্ধ পরেশ কুমার গুপ্তা। তিনি কৈলাস বোস স্ট্রিটের বাসিন্দা। বয়স ৬৩ বছর। উত্তর কলকাতার একটি গেঞ্জির কারখানায় কাজ করতেন। অবসরের পর কাজ করতে বলেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পরেশবাবু ও মুখো হননি। গঙ্গা বাঁচানোর নেশার ভূত তাঁকে চেপে ধরেছিল। তাই প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এখন সাইকেল থামান। তারপর চিৎকার করে ‘কেন গঙ্গাকে দূষণমুক্ত রাখার প্রয়োজন’ তা বলেন। একইসঙ্গে শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া খালগুলি কেন সাফসুতরো রাখার দরকার তাও জানান সবাইকে। 


    গাড়ির হর্নের আওয়াজের চোটে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। মানুষের কোলাহলে বৃদ্ধের আর্জির কথা অনেক সময় ঢাকা পড়ে যায়। কিন্তু দমেন না তিনি। নিজেই নিজের যে কর্তব্য ঠিক করে নিয়েছেন সেই দায়িত্বের প্রতি অবিচল থাকেন। হাসিমুখে বলেন, ‘এই বয়সে আর চাওয়া পাওয়ার কি থাকতে পারে। তাই এ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। গঙ্গা, প্রকৃতি ও নদীনালা যদি বাঁচে তা হলে আমরাও বাঁচব। আমরা অবিবেচকের মতো সব ধ্বংস করে চলেছি। সরকারের একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। আমাদের অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। আবর্জনা গঙ্গায় আমরা ফেলে দিয়ে আসি। প্রতিদিন নানা বর্জ্য গঙ্গায় পড়ছে। বিভিন্ন রাসায়নিক মিশছে। প্রতিদিন গঙ্গার জল দূষিত হচ্ছে। লুপ্ত হচ্ছে জলজ প্রাণী। কমছে মাছের সংখ্যা। তাই গঙ্গাকে বাঁচানো বড় জরুরি। সেই তাগিদেই এই কাজ বেছে নিয়েছি।’ 


    তাঁর সাইকেলের দু’ধারে পরিবেশ বাঁচানো সম্পর্কিত ব্যানার টাঙানো। ভোরে উঠে টুকিটাকি কাজ সেরে, স্নান, খাওয়া-দাওয়ার পর ব্যাগে ছাতা, জলের বোতল, কিছু শুকনো খাবার নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। সঙ্গী প্রিয় সাইকেল। ঝড়-বৃষ্টি রোদ থেকে বাঁচতে মাথায় টুপি। সামাজিক অনুষ্ঠানগুলিতে গিয়ে সাইকেল থামিয়ে মানুষের কাছে হাতজোড় করে বলেন, ‘আমি এসেছি বিনীত আবেদন নিয়ে। কখনও কোনও আবর্জনা গঙ্গা ও নদীনালায় ফেলবেন না। অহেতুক গাছপালা ধ্বংস করবেন না। খুব প্রয়োজন ছাড়া গাছের ডাল কাটবেন না।’ কাতর আবেদন শুনে কোনও সংগঠন তাঁকে সেলাম জানায়।‌ পথচলতি বহু মানুষ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। পরেশ কারও কাছ থেকে কোনও আর্থিক সাহায্য নেন না। সবাইকে বলেন, ‘গঙ্গা, প্রকৃতি, গাছপালা বাঁচান। তাতেই আমি আনন্দ পাব।’ কাশীপুর রোডে সাইকেল থামিয়ে কিছু মানুষকে বোঝাচ্ছিলেন শহরের খাল ও খালধারগুলি নিয়মিত পরিষ্কার না করলে জমা জলে মশা-মাছি বাড়বে। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়বে। তাই সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তারপর বলেন, ‘ফিট আছি। কাজের মধ্যে আছি বলে মনটাও চাঙ্গা। এই কাজ করতে গিয়ে কেউ হাসিঠাট্টা করেন। কেউ ভালোবাসেন। দাঁড়িয়ে যত্ন করে কথা শোনেন।’ সাইকেলে ওল্ড চিৎপুর ব্রিজে ওঠার মুখে পরেশবাবু পরিবেশের স্বপক্ষে চিৎকার করে বলতে বলতে প্যাডেলের গতি বাড়িয়ে জন কোলাহলের মাঝে মিলিয়ে গেলেন হঠাৎ।
  • Link to this news (বর্তমান)