এই সময়: মঙ্গলবার সংসদে দাঁড়িয়ে বাংলার তৃণমূল সরকারকে তীক্ষ্ণ বাক্যবাণে বিঁধেছিলেন নির্মলা সীতারামন। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোপের মুখে পড়লেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে বিতর্কে জবাবি ভাষণে মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গে মিড–ডে মিল, একশো দিনের কাজে জব–কার্ড, আবাস যোজনা, রেশন ব্যবস্থায় দুর্নীতি হয়েছে বলে খোলাখুলি অভিযোগ করেন নির্মলা। লোকসভাতেই এর প্রতিবাদ জানান জোড়াফুল সাংসদরা। তবে দেশের অর্থমন্ত্রীর এই সমালোচনায় প্রবল ক্রুদ্ধ মমতা। বিধানসভায় বুধবার রাজ্য বাজেট পেশ হওয়ার পরে প্রেস কর্নারে মমতা সাংবাদিক বৈঠকে নির্মলার উদ্দেশে বলেন, ‘ওঁদের নিজেদের দুর্নীতি আগে সামলাতে বলুন। নির্মলাদেবী, আপনি বাংলাকে নিয়ে কম ভাবুন।’
এরপরেই তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘নির্মলাদেবী উজালার (উজ্জ্বলা প্রকল্প) কী হলো? নির্বাচনের সময়ে আপনি উজালা করেছিলেন। এখন উজালার কী ভবিষ্যৎ? আপনি তো কিছুই করেন না, শুধু ভাষণ দেন! কোথায় গেল (রাজ্যের) টাকা? এখন তো শুধু আমরা নই, গুজরাটও বলছে, টাকা দাও। সব কিছু আপনারা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন। দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে বুলডোজ় করতে চাইছেন।’
এক সময়ে ভোট প্রচারে নরেন্দ্র মোদীর বড় হাতিয়ার ছিল উজ্জ্বলা গ্যাস যোজনা। কিন্তু যত দিন গিয়েছে, ততই উজ্জ্বলা নিয়ে হইচই করা বন্ধ করে দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। মমতা তা নিয়েই এ দিন নির্মলাকে বিঁধেছেন। সংসদে কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে বিতর্কে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বাংলা বিরোধী বাজেট’ বলে চিহ্নিত করেছিলেন নির্মলার বাজেটকে। অভিষেকের আক্রমণের সামনে নির্মলা দুর্নীতি ইস্যু নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধতে নিজেই ময়দানে নামেন।
মমতা এ দিন পাল্টা মোদী সরকারকে এই দুর্নীতি ইস্যু নিয়েই নিশানা করেছেন। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি ভোট–দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর আরও অভিযোগ, স্রেফ ভোট–চুরি করে বিজেপি জয়ী হচ্ছে। মহারাষ্ট্র, বিহারে ভোটার তালিকায় অনিয়ম করে বিজেপি জিতেছে।
নির্মলাকে উদ্দেশ করে মমতা বলেন, ‘অনলাইনের ভোটার লিস্টে নাম তোলার যুক্তি দিয়ে নির্বাচন কমিশনের সাহায্য নিয়েছেন। সিবিআই, ইডি পাঠাচ্ছেন! এটাই ভূতুড়ে রাজনৈতিক দলের কাজ। ওই রাজনৈতিক দলের নাম নিতে চাই না। বিহারের লোকদের অনলাইনে (দিল্লিতে) নাম তুলিয়েছে। কেন অনলাইনে হবে? ভোটার, আধার কার্ডে নাম তুলতে গেলে সশরীরে হাজিরা দিতে হয়।’
সংসদে দাঁড়িয়ে নির্মলা বাংলায় তৃণমূল জমানার দুর্নীতিকে অস্ত্র করতে চাওয়ায় মমতা পাল্টা বুঝিয়েছেন, বিজেপি ভূতুড়ে ভোটারদের ভোটে জয়ী হয়ে একাধিক রাজ্যে ক্ষমতায় বসেছে। এই ভাবে ভোটার তালিকায় ম্যানিপুলেশন বড় দুর্নীতি। সরাসরি বিজেপির নাম না–করে মমতার প্রশ্ন, ‘মহারাষ্ট্রে ৪০ লক্ষ ভোট বাড়ল কী করে? দিল্লিতে কী করেছেন? একদিন না একদিন তো বেরোবেই। আমরা অঙ্ক কষে দেখে নিয়েছি, এখানেও বাবুরা এসে বসে আছে। প্রত্যেক বিধানসভায় ২০–৩০ হাজার বাইরের লোকের নাম ঢোকাবে! যারা বাংলার ভোটার নয়, তারা ভোট দেবে! এই পরিকল্পনা আমরা ভেস্তে দেবো। অন্য রাজ্য যেটা পারে না, বাংলা পারে। এই চুরি আমরা ধরে ফেলেছি।’
এ বারের কেন্দ্রীয় বাজেটে বিহারের জন্য একাধিক প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে। বিহারের ভোটের দিকে তাকিয়ে নির্মলা এই বাজেট করেছেন বলে বিরোধীপক্ষের অভিযোগ। মমতা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় বাজেটে বিহারের জন্য ঢালাও ঘোষণা থাকলেও সেখানে ভোট হয়ে গেলে কোনও অর্থ বরাদ্দ হবে না।
মমতার কথায়, ‘বিহারকে দিয়েছে, এতে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু ভোটের পর দেখবেন, (বিহার) কিছুই পায়নি। ওদের (বিহারকে) শূন্য দেওয়া হয়েছে! ওরা (বিজেপি) হলো ইলেকশন হিরো। ভোটের সময়ে দেখবেন পূজা করতে যায়, একটি ধর্মকে গরিমান্বিত করে। তপস্যা করে, ধ্যান করে, স্নান করতে যায়, নির্বাচনের দিনে ভাষণ দেয়। ভোটের সময়ে এলে স্বামী বিবেকানন্দের নাম নেয়!’ নাম না–করে মমতা এই তপস্যা, ধ্যান, স্নান করার কথা বলে আসলে প্রধানমন্ত্রীকেই কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন বলে তৃণমূল নেতাদের একাংশের পর্যবেক্ষণ।