রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি
ভাত–রুটি বা অন্য কোনও খাবার মুখে তুলছেন না তিনি। হাতের সামনে ও সব দেখলে ক্ষেপে যাচ্ছেন অভিযুক্ত। পুলিশ কর্মীদের দেখে নেওয়ার হুমকিও দিচ্ছেন। কিন্তু অভিযুক্ত হলেও তো খালি পেটে রাখা যাবে না! তাহলে আবার মানবাধিকার কমিশনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। বাধ্য হয়ে কোকেন কাণ্ডে ধৃত নাইজেরিয়ান অভিযুক্তকে ড্রাই ফ্রুটস, কিসমিস সাপ্লাই করতে করতে নাজেহাল অবস্থা পুলিশের। অত দামি খাবার জোগান দিতে গিয়ে পকেট খালি হচ্ছে পুলিশ কর্তাদেরই!
দিন চারেক আগে রাজ্যে কোকেন পাচারের মাস্টারমাইন্ড গুডলাক চিমজি মাওয়াকমা নামে এক নাইজেরিয়ানকে হরিয়ানা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, মূলত শিলিগুড়িকে কেন্দ্র করে উত্তরবঙ্গ জুড়ে মাদকের জাল ছড়িয়েছে অভিযুক্তরা। এর পিছনে ধৃত নাইজেরিয়ানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ফলে তাঁকে ভালো ভাবে খাবার খাইয়ে বিস্তারিত তথ্য আদায় করতে চান তদন্তকারীরা।
উত্তরবঙ্গ জুড়ে মাদকের কারবার যেভাবে জাঁকিয়ে বসেছে সেই তথ্য জানার পরে তৎপর হয়ে উঠেছেন পুলিশ কর্তারা। মাদকের কারবারিদের বাগে আনতে উত্তরবঙ্গের সব জেলার পুলিশকর্তাদের নিয়ে বুধবার বৈঠক করেন রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) এডিজি বিনীত গোয়েল। সঙ্গে ছিলেন এসটিএফের আইজি গৌরব শর্মা।
বুধবার বুধবার মাল্লাগুড়িতে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের কনফারেন্স হলে বৈঠক হয়। সেখানে উত্তরবঙ্গের সব জেলার পুলিশ সুপার, ডিআইজি, আইজি, শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার সহ পদস্থ পুলিশ কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ দিনের বৈঠক নিয়ে পুলিশকর্তারা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত নাইজেরিয়ানের কাছ থেকে তিনটি নকল পাসপোর্ট, কিছু ভারতীয় নকল পরিচয় পত্র উদ্ধার করা হয়। গত জানুয়ারি মাসে শিলিগুড়ির ডাঙ্গিপাড়া এলাকা থেকে কোকেন সমেত সরতাজ আলম নামে এক কাপড় ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছিল রাজ্য পুলিশের এসটিএফ এবং শিলিগুড়ি থানা। অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাসাং মোক্তান নামে আরও এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই পাসাং–কে ধরার পরে নাইজেরিয়ানের খোঁজ মেলে।
পুলিশ জানতে পারে, স্টুডেন্ট ভিসায় এসে অভিযুক্ত হরিয়ানাতে গত ১২ বছর ধরে লুকিয়ে রয়েছেন। নাইজেরিয়া থেকে প্রথম দিল্লিতে এরপর হরিয়ানাতে ঘর ভাড়া নিয়ে কারবার চালাচ্ছিলেন তিনি। আফ্রিকা থেকে চোরা পথে কোকেন এনে শিলিগুড়িতে পাসাংয়ের কাছে পাঠানো হতো। এরপর পাসাং তা সরতাজের কাছে পাঠালে মাদক শহর জুড়ে বিক্রি করা হতো।
এই ঘটনায় আর কারা কারা যুক্ত রয়েছে তার খোঁজও শুরু করেছে এসটিএফ। সেই ঘটনার তদন্তেই শিলিগুড়িতে এসেছেন রাজ্য পুলিশের এসটিএফের এডিজি বিনীত গোয়েল। সাম্প্রতিক কালে রেলপথেও যেহেতু প্রচুর মাদকের কারবার হচ্ছে, তাই শিলিগুড়ির রেল পুলিশের সুপারকেও বৈঠকে ডাকা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।