• ‘একবার যদি বলত...’ ছেলের শাস্তি শুনে চোখে জল ছেলের হাতেই আক্রান্ত মায়ের
    এই সময় | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • দীর্ঘদিন সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা চলছিল। মায়ের সঙ্গে কিছুতেই বনিবনা হচ্ছিল না ছোট ছেলের। সেই ঝামেলার কারণেই একদিন ধারালো অস্ত্র দিয়ে মায়ের উপর চড়াও হয়েছিল ছেলে। মায়ের উপর প্রায় প্রাণঘাতী হামলা করেছিল ছেলে। ওই মামলায় দেড় বছরের মাথায় ১০ বছরের জেল হলো অভিযুক্ত ছোটো ছেলের। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর জেলা আদালত দোষীকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করে।

    কী ঘটেছিল?

    ২০২৩ সালের ৩ জুলাইয়ের বিকেল। পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুর থানার তনুয়া এলাকার ঘটনা। ৭২ বছরের বৃদ্ধা জয়ন্তী জানার উপর শাবল নিয়ে হামলা করে তাঁর ছোট ছেলে রতন জানা। শাবল দিয়ে মায়ের মাথায় আঘাত করে রতন। মাথায় আঘাত পেয়ে লুটিয়ে পড়েন জয়ন্তী দেবী। তাঁর চিৎকার শুনে ছুটে আসেন বড় ছেলে গৌতম ও পড়শিরা। তাঁদের দেখেই শাবল ফেলে ছুটে পালিয়ে যায় রতন। বৃদ্ধাকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে মোহনপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। প্রায় মাসখানেক চিকিৎসার পরে একটু সুস্থ হলে, ওই বছরের ২ অগস্ট ছেলের বিরুদ্ধে মোহনপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন জয়ন্তী দেবী।

    পুলিশের তদন্তে উঠে আসে যে, জয়ন্তী দেবীর দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে, তিনি দিল্লিতে থাকেন। মেয়ের ভাগের জমিজমা ও গাছ জয়ন্তী দেবীই দেখাশোনা করতেন। সম্পত্তির ভাগাভাগি পছন্দ হয়নি রতনের। দিদির সম্পত্তির অংশ রতন চাইত বলে অভিযোগ। তাতে বাধা দিতেন জয়ন্তী দেবী। এই ঘটনা নিয়েই অশান্তি লেগে থাকত। মা-কে প্রায়শই রতন মারধর করতো বলে অভিযোগ ছিল। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে বড় ছেলের কাছে থাকতেন জয়ন্তী দেবী। ২০০৩ সালের ৩ জুলাই হঠাৎ দিদির জমিতে থাকা বেশ কিছু বড় বড় গাছ কেটে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করে রতন। সেই কাজে বাধা দিতেই মায়ের উপর হামলা করে ছোট ছেলে। ওই তদন্ত শেষ করে ২০২৪-এর জানুয়ারিতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। অভিযুক্ত রতন জানাকে দোষী সাব্যস্ত করে, রায়দান করলেন মেদিনীপুর জেলা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা জজ (তৃতীয় আদালত) কুসুমিকা দে মিত্র। সরকারি আইনজীবী মৃন্ময় ঘোষ বলেন, ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে মাত্র এক বছরের মধ্যেই সাজা ঘোষণা করেছেন বিচারক।

    জয়ন্তী দেবীর বয়স এখন ৭৪। বৃহস্পতিবার তিনি আদালতে আসেননি। আইনজীবীর কাছ থেকে ফোনে খবর পেয়েছেন। বাড়ির লোক জানাচ্ছেন, খবর শুনেই জল গড়িয়েছে মায়ের চোখ বেয়ে। বিড়বিড় করছিলেন, ‘ভেবেছিলাম ক্ষমা করে দেব। মামলা তুলে নেব। শুধু একবার যদি ভুল স্বীকার করে সামনে এসে দাঁড়াত! বলত, মা ভুল হয়ে গেছে....।’

  • Link to this news (এই সময়)