• ফরাক্কা থেকে পার্ক স্ট্রিট! প্রধান শিক্ষককে মারধরের অভিযোগে ধৃত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি
    প্রতিদিন | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • শাহজাদ হোসেন, ফরাক্কা: স্কুলের প্রধান শিক্ষককে মারধরের মতো গুরুতর অভিযোগ। ঘটনা লিখিত অভিযোগ দায়ের হতেই ফরাক্কা থেকে সোজা কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে চলে এসেছিলেন অন্যতম অভিযুক্ত স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। কিন্তু বেশিদিন লুকিয়ে থাকতে পারলেন না। পার্ক স্ট্রিটে এমএলএ হোস্টেলে ফরাক্কার বিধায়কের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েই ধরা পড়লেন পুলিশের জালে। গ্রেপ্তার হন নিউ ফরাক্কা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অরুণময় দাস। বৃহস্পতিবার তাকে তোলা হয়েছে জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে।

    স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অরুণময় দাস ফরাক্কা ব্লকের অধ্যাপক সৈয়দ নুরুল হাসান কলেজের হেড ক্লার্ক পদে কর্মরত। ফরাক্কা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি ও বর্তমানে জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সদস্য। নিউ ফরাক্কা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নতুন অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ছাত্রছাত্রীদের জন্য নতুন রুটিন তৈরি করে। সেই রুটিন কার্যকর করাকে কেন্দ্র করে স্কুলের চার সহকারী শিক্ষকের সঙ্গে গত ৩১ জানুয়ারি স্কুলের মধ্যে বচসায় হয়ে জড়িয়ে পড়েন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মনিরুল ইসলাম। অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের ঘরের মধ্যে চারজন সহকারী শিক্ষক তাঁকে মারধর করেন। ঘটনার সময় প্রধান শিক্ষকের ঘরেই উপস্থিত ছিলেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তথা ফরাক্কা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি অরুণময় দাস। মারধরের ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের পা ভেঙে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাত পান। তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

    ১ ফেব্রুয়ারি প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মনিরুল ইসলামের স্ত্রী মৌসুমী খান ফরাক্কা থানায় চার সহকারী শিক্ষক তারিফ হোসেন, মহম্মদ সোহরাব আলি, কিরণচন্দ্র দাস, সুজন স্বর্ণকার-সহ স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অরুণময় দাসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরই ফরাক্কা থানার পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষককে খুন করার চেষ্টা এবং সরকারি কর্মীকে কর্মক্ষেত্রে বাধাদান, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে। ঘটনার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ সুজন স্বর্ণকার নামে এক সহকারী শিক্ষককে গ্রেপ্ততার করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে ধৃত শিক্ষক ১৭ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত জেল হেফাজতে রয়েছেন। ঘটনার পর তিন সহকারী শিক্ষক-সহ পলাতক ছিলেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অরুণময় দাস। বুধবার সকালে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বুধবার পুলিশ অরুণময় দাসকে কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে গোপন ডেরা থেকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ সূত্রে খবর, পার্ক স্ট্রিটের এমএলএ হস্টেলে এলাকার বিধায়কের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি।

    তবে তাঁর গ্রেপ্তারিতে তীব্র সমালোচনা করেছেন ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, ”ঘটনার দিন স্কুলে যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল, সেই সময় অরুণময় নিজে ফোন করে পুলিশ ডেকেছিলেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের মতানৈক্য তৈরি হওয়ায় সমস্যার সমাধানের জন্য স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে সেদিন অরুণময় দাস ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর অন্য কোনও ভূমিকা ছিল না। পুলিশ কোনওরকম তদন্ত না করে প্রধান শিক্ষকের তরফ থেকে দায়ের হওয়া লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অরুণময় দাসকে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।” প্রহৃত প্রধান শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া, ”অরুণময় দাস অনেক আগেই গ্রেপ্তার হওয়া উচিত ছিল। আমাকে মারধরের ঘটনায় যারা যুক্ত ছিল তাদের সকলের গ্রেপ্তারি দাবি করছি।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)