নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে অর্থ, সংস্থা উন্নয়ন ও পরিকল্পনার স্থায়ী সমিতির বৈঠক বয়কট করলেন কর্মাধ্যক্ষরা। জেলায় গ্রামোন্নয়নের কয়েকশো কোটি টাকা পড়ে আছে। দ্রুত সেই অর্থ খরচের ব্যাপারে বৈঠক ডেকেছিলেন জেলা পরিষদের সচিব। গত ৫ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়ে জানানো হয় বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো থেকে সেই বৈঠক হবে। তারপর বৈঠকটি সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ শুরু হবে বলে কর্মাধ্যক্ষদের সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে সভাধিপতি ও পূর্ত পরিবহণ কর্মাধ্যক্ষ শামসুরজোহা বিশ্বাস ছাড়া আর কোনও কর্মাধ্যক্ষ এদিন হাজির হননি। যা নিয়ে রীতিমতো বিতর্ক শুরু হয়েছে। জেলা পরিষদ পরিচালনা সঠিকভাবে হচ্ছে না এবং টেন্ডার প্রক্রিয়ায় গাফিলতি আছে বলে অভিযোগ তুলছে বেশ কয়েকজন কর্মাধ্যক্ষ। এদিন বৈঠক উপলক্ষ্যে জেলা পরিষদে হাজির ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক(জেলা পরিষদ) শামসুর রহমান। তিনি জেলা পরিষদের সভাধিপতির ঘরে গিয়ে বৈঠকের জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষাও করেন। কিন্তু, অন্য কর্মাধ্যক্ষরা না আসায় বৈঠক বাতিল হয়ে যায়। এদিনের বৈঠকে আগামী আর্থিক বছরের চূড়ান্ত বাজেট অনুমোদন হওয়ার কথা থাকলেও তা করা যায়নি।
উল্লেখ্য, জেলা পরিষদের বেশ কয়েকজন কর্মাধ্যক্ষ টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, নিজের পছন্দমতো সংস্থাকে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে নিয়মিত। এমনকী সকলকে সমানভাবে কাজ বণ্টন করা হচ্ছে না। তাই অর্থের বৈঠকে গরহাজির থেকে তাঁরা কার্যত বিদ্রোহ করলেন।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা বলেন, এদিন অর্থের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। তবে কর্মাধ্যক্ষদের অধিকাংশই অনুপস্থিত ছিল। কী কারণে তাঁরা আসেননি, তা আমরা আগামী দিনে আলোচনায় বসে পর্যালোচনা করব।
জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিকাশ স্থায়ী কর্মাধ্যক্ষ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেকদিন আগেই আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। তবে এদিন আমাদের একটি পরব থাকায় আমি ব্যক্তিগতভাবে হাজির থাকতে পারিনি।
জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শফিউজ্জামান শেখ বলেন, জেলা পরিষদ পরিচালনার ক্ষেত্রে হয়তো কিছু সমস্যা হচ্ছে। সেই জন্য কোনও কোনও কর্মাধ্যক্ষ হয়তো যাননি। বৈঠক কেন বাতিল হয়েছে অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) বলতে পারবেন।
এবিষয়ে জানতে গেলে অতিরিক্ত জেলাশাসক(জেলা পরিষদ) অফিসে থাকা সত্ত্বেও ছুটির দিন বলে দেখা করতে চাননি। কংগ্রেস নেতা তথা জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদার বলেন, তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল ছাড়া কিছুই না। টাকা খাওয়া নিয়ে নিজেদের মধ্যে সমস্যা। জেলা পরিষদ পরিচালনা নিয়ে এতদিন বিরোধী সদস্যরা বিদ্রোহ ঘোষণা করতেন। সাধারণ সদস্যরা বিক্ষুব্ধ ছিলেন। এবার কর্মাধ্যক্ষরাই বিরোধিতা করছেন। শুধু এটাই দেখার বাকি ছিল। দীর্ঘদিন এই জেলা পরিষদে কোনও কাজ হয় না। এদিন অর্থের বৈঠক না হওয়ায় উন্নয়নের কাজ হবে কী করে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলা পরিষদ সদস্য বলেন, সার্বিকভাবে উন্নয়নের কাজ হবে কী করে! এখানে একজন কর্মাধ্যক্ষ সমস্ত কাজ করছেন। বাকিদের কপালে কিছুই জোটে না। এলাকায় তো কাজ নিয়ে এবার মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়তে হবে।