নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির নামে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠল এগরায়। প্রতারিতদের তালিকায় রাজ্যের জিএসটি দপ্তরের দুই অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি কমিশনারের ছেলে সহ অনেকেই আছেন। খগেনচন্দ্র কুইল্যা নামে জিএসটি-র প্রাক্তন ডেপুটি কমিশনার ১২ফেব্রুয়ারি এগরা থানায় এনিয়ে এফআইআর করেছেন। রাজ্য পুলিসের শীর্ষস্তর থেকেও এই ঘটনায় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জেলা পুলিস সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। খগেনচন্দ্রবাবুর সহকর্মী তথা জিএসটি বিভাগের আরেক অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি কমিশনার সুব্রত পালও নিজের ছেলের জন্য টাকা দিয়ে ঠকে গিয়েছেন। গোটা ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে এগরা থানার পুলিস। অভিযুক্তের নাম উজ্জ্বল পড়্যা। তার বাড়ি এগরা থানার শিমুলিয়াবাড় গ্রামে। বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ, নার্সিং কলেজে ভর্তির প্রলোভন দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ। অভিযুক্তের খোঁজ পেতে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিস।
জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত উজ্জ্বল নিজেকে এমবিবিএস, বিএসসি নার্সিং এবং জিএনএম নার্সিং কোর্সে ভর্তির জন্য ফেসিলিটেটর হিসেবে পরিচয় দেয়। অভিযোগকারী খগেনচন্দ্রবাবুর বাড়ি এগরা থানার বিলচাউলদা গ্রামে। বর্তমানে কলকাতায় বসবাস করেন। অবসরপ্রাপ্ত ওই জিএসটি কর্তার এক ছেলে ও মেয়ে। সন্তানদের সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়ানোর জন্য নানাভাবে চেষ্টা করছিলেন। এরমধ্যেই তাঁর সঙ্গে উজ্জ্বলের পরিচয় হয়। তাঁর ছেলেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির টোপ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি খগেনচন্দ্রবাবুকে সামনে রেখে প্রতারণায় অভিযুক্ত আরও বেশ কয়েকজনের টাকা সংগ্রহ করে বলে অভিযোগ। উজ্জ্বলের কথামতো তিনি নিজে সহকর্মী সুব্রত পালের ছেলেকে এনআরএস মেডিক্যালে ভর্তির জন্য ছ’লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে তুলে দেন। সুব্রতবাবুও জিএসটি দপ্তরের ডেপুটি কমিশনার ছিলেন। সদ্য অবসর নিয়েছেন। এছাড়া, খগেনচন্দ্রবাবু নিজের শ্যালিকার ছেলেকে আর জি কর নার্সিং কলেজে বিএসসি নার্সিং কোর্সে ভর্তির জন্য প্রায় তিন লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন।
অবসরপ্রাপ্ত ওই জিএসটি কর্তাকে সামনে রেখে এভাবে অনেকের কাছ থেকে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। খগেনচন্দ্র কুইল্যার দাবি, তিনি দফায় দফায় অভিযুক্তকে ২৯লক্ষ ১৩হাজার ৫০০টাকা দিয়েছেন। নিজে গ্যারেন্টার হিসেবে টাকা তোলার জন্য তাঁকেই বিপদে পড়তে হয়। মেডিক্যাল ও নার্সিংয়ে ভর্তির ঘটনায় প্রতারিতরা তাঁর কাছ থেকে টাকা চাওয়া শুরু করেন। গোটা ঘটনায় তিনি অথৈ জলে পড়ে যান। এরপর অবসরকালীন পাওয়া তহবিল ভাঙিয়ে সেইসব টাকা দিতে হয়েছে বলে দাবি করেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি এগরা ও কাঁথির বিভিন্ন জায়গায় এভাবে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও নার্সিং কলেজে ভর্তির টোপ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছে বলে অভিযোগ।
অভিযোগকারী বলেন, এতবছর ধরে জিএসটিতে চাকরি করেছি। ২০২৩সালে ৩১ডিসেম্বর চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। বাবা হিসেবে সন্তানদের ডাক্তার করার স্বপ্ন দেখেছিলাম। তাতে এভাবে ঠকতে হবে ভাবতে পারিনি। আমি নিজে উদ্যোগী হয়ে আরও বেশ কয়েকজনের সন্তানকে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও নার্সিং কলেজে ভর্তির জন্য টাকা সংগ্রহ করে তুলে দিয়েছি। এখন তাঁরা সকলে আমার উপর চাপ বাড়ানোয় আমি নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে শোধ করেছি।
অভিযুক্ত উজ্জ্বল পড়্যার ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি। পুলিস জানিয়েছে, ১২ফেব্রুয়ারি এফআইআর দায়ের হয়। ঘটনার তদন্ত চলছে। অভিযুক্তের অ্যাকাউন্ট নম্বরগুলি ফ্রিজ করার কাজ চলছে।