হস্তান্তর করা কন্যা সন্তানকে ফিরিয়ে আনলেন পটাশপুরের অভিযুক্ত দম্পতি
বর্তমান | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সংবাদদাতা, কাঁথি: পটাশপুর থানার দক্ষিণ ইটাবেড়িয়া এলাকার এক দম্পতি কয়েকদিন আগে তাঁদের সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। অবশ্য অভিযোগ ওঠার পর পুলিসি তৎপরতায় তাঁরা বুধবার রাতে নিজেদের শিশুকন্যাকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছেন। যদিও বাবা-মায়ের দাবি, শিশুকন্যাকে বিক্রি করা হয়নি। দারিদ্র্যতার কারণে মেয়ের খাবার জোগাড় করতে পারছিলেন না। তাই লেখালেখি করে নিঃশর্তভাবে এক নিঃসন্তান দম্পতিকে দান করেছিলেন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। থানার ওসি সুরজ আশ বলেন, শিশুকন্যা বর্তমানে বাড়িতেই রয়েছে। ঘটনার তদন্ত জারি রয়েছে। পাশাপাশি সমগ্র পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ইটাবেড়িয়ার বাসিন্দা খোকন মাইতি ও কল্পনা মাইতি। পেশায় দিনমজুর খোকন। দম্পতির আগের চারজন মেয়ে রয়েছে। পুত্রের আশায় পঞ্চমবার সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মাইতি দম্পতি। বেশ কিছুদিন আগে কল্পনাকে নিয়ে ইটাবেড়িয়া বাজারে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন খোকন। সেখানে এগরার এক নিঃসন্তান দম্পতি গৌতম পাত্র ও শকুন্তলা পাত্রের সঙ্গে তাঁদের আলাপ হয়েছিল। আলাপ থেকে দুই পরিবারের যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। পরবর্তীকালে পঞ্চম সন্তান মেয়ে হলে মাইতি দম্পতি তাকে নিঃসন্তান ওই দম্পতির হাতে তুলে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। সেইমতো ২ ফেব্রুয়ারি কন্যাসন্তানেরই জন্ম দেন কল্পনা। আগের প্রতিশ্রুতিমতো ৪ ফেব্রুয়ারি স্ট্যাম্প পেপারে লেখালেখি হয় এবং কন্যাসন্তানকে নিঃসন্তান দম্পতির হাতে তুলে দেন মাইতি দম্পতি। এমনকী অঙ্গীকারপত্রে ভবিষ্যতে শিশুকন্যাকে নিজেদের বলে দাবি না করারও প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ক্রমশ বিষয়টি জানাজানি হয়। প্রতিবেশীরা অভিযোগ করেন, মোটা টাকার বিনিময়ে শিশুকন্যাকে নিঃসন্তান দম্পতিকে বিক্রি করে দিয়েছেন মাইতি দম্পতি। বিষয়টি জানার পর পুলিস-প্রশাসনের মধ্যে তৎপরতা শুরু হয়। যদিও খোকন বলেন, অভাবের সংসারে মেয়েকে মানুষ করার ক্ষমতা নেই। নিজের মেয়ে যাতে ভালো থাকে, তার জন্য পরিচিত নিঃসন্তান ওই দম্পতিকে নিঃশর্তভাবে দান করেছিলাম। বিক্রি করিনি। কোনও টাকা পয়সার লেনদেন হয়নি। মেয়ে আবার ফিরে এসেছে।
পটাশপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি স্বপন মাইতি বলেন, আমরা যতদূর জানি, আইনি পদ্ধতি না মেনে এভাবে কারও হাতে নিজেদের শিশুসন্তানকে তুলে দেওয়া যায় না। এটা বেআইনি। তার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। আমরা আশা করব, এব্যাপারে সকলে সচেতন হবেন।