নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: যাত্রাপালা দেখে শিল্পীর প্রেমে ফিদা হয়ে ঘর ছাড়লেন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নাবালিকা। পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থেকে প্রায় ২৭৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সে বুধবার ভূপতিনগরে বহিচবেড়িয়া এলাকায় ওই যুবকের বাড়িতে পৌঁছে যায়। মাধ্যমিকে শুধুমাত্র বাংলা পরীক্ষা দেওয়ার পর প্রেমের টানে আর পড়াশোনা করতে পারেনি। তাই সে আর পরীক্ষা কেন্দ্রের ধারেকাছে ঘেঁষেনি। সব বাধা পেরিয়ে ভূপতিনগর থানা সংলগ্ন বহিচবেড়িয়া গ্রামে প্রেমিকের বাড়িতে হাজির হয়। বৃহস্পতিবার ভাতার থানার ওড়গ্রাম হাজরাপাড়া থেকে ওই নাবালিকার বাবা-মা, মাসি ও মেসো ভূপতিনগরে হাজির হন। ওই নাবালিকা ও তার প্রেমিককেও থানায় আনা হয়। দু’জনকে বুঝিয়ে পুলিস ওই নাবালিকাকে বাড়ির লোকজনের হাতে তুলে দেয়।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সরস্বতী পুজো উপলক্ষ্যে গত ৫ ফেব্রুয়ারি একটি অপেরা দল যাত্রা করতে ভাতার থানার ওড়গ্রামে যায়। ওই দলের একজন সদস্য হলেন ভূপতিনগরের এক যুবক। সেই যাত্রাপালা দেখতে গিয়েছিল এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ওই ছাত্রী। সে ওড়গ্রাম হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। গুসকরা পিপি ইন্সটিটিউশনে তার সেন্টার পড়েছে। যুবকের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয় ওই ছাত্রী। ওই শিল্পীর সঙ্গে পরিচয় করার জন্য অনেক বাধা উপেক্ষা করে গ্রিনরুমে পৌঁছে যায়। সেখানে যুবকের কাছ থেকে ফোন নম্বরও জোগাড় করে। তারপর ভোররাত পর্যন্ত ফোনালাপ চলে।
তরুণ যাত্রাশিল্পীর মধ্যে ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর প্রেম এতটাই জমে ওঠে যে পরীক্ষা দেওয়ার কথা ভুলে যায়। রাতদিন দু’জনে ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বাড়ির লোকজন মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য জোর করলেও ওই ছাত্রী তাতে কর্ণপাত করেনি। অনেক রাত পর্যন্ত তারা ফোনে কথাবার্তা বলত। দু’দিন আগে ওই ছাত্রী প্রেমিকের সঙ্গে সংসার করার জন্য বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসে। বুধবার বিকালে ভূপতিনগরে ওই যুবকের বাড়িতে হাজির হয়। ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকায় হইচই বেধে যায়। ফোন করে বিষয়টি থানায় জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার ওই ছাত্রীর পরিবারের লোকজন ভূপতিনগরে হাজির হন। তাঁরা প্রথমে ওই যাত্রাশিল্পীর বাড়িতে যান। সেখান থেকে তাঁরা থানায় হাজির হন। ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এবং তার প্রেমিককে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ছাত্রীর বয়স এখন ১৬ বছর। ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে বৈধ নয় বলে ছাত্রীকে বোঝানো হয়। পুলিস দু’জনকে বোঝানোর পর ওই ছাত্রীকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেয় পুলিস।
ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, মেয়ে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছিল। সরস্বতী পুজোর সময় আমাদের এলাকায় যাত্রা হয়। সেই যাত্রাপালা করতে আসা এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর মেয়ে পরীক্ষা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তারপর বাড়ি থেকে এভাবে বেরিয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। আমরা শেষমেশ মেয়েকে বুঝিয়ে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। ভূপতিনগর থানার পুলিস জানিয়েছে, দু’পক্ষকেই বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।