নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: দেউচা পাচামিতে খননকাজ গতি পেয়েছে। এবার শুরু হল মহুয়া গাছের পুনর্বাসন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সেই কাজ শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে জানা গিয়েছে, এদিন প্রায় পাঁচটি গাছ সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। আজ, শুক্রবার ওই গাছগুলিকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে প্রতিস্থাপন করা হবে। তার আগে গাছগুলির পরিচর্যার কাজ চলছে। কোনওভাবেই যাতে একটি গাছও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসারেই সমস্ত কাজ এগচ্ছে। প্রথম ধাপে দ্রুত প্রকল্প এলাকায় থাকা গাছগুলি সরানো হবে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে বাকি গাছগুলিও স্থানান্তরিত করা হবে। এদিন মহকুমা শাসক সুপ্রতীক সিনহা প্রকল্প এলাকায় গিয়ে সেই কাজ খতিয়ে দেখেন।
জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রী শুধু দেউচা পাচামির স্বপ্নের কথা বলেননি। তিনি প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখে সামগ্রিক উন্নয়নের কথা বলেছেন। সেই মোতাবেক কাজ চলছে।
এশিয়ার সর্ববৃহৎ কয়লা ব্লক দেউচা পাচামিতে মহুয়ার জঙ্গল রয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে জানা গিয়েছে, সেখানে প্রায় ৮২০টি মহুয়া গাছ রয়েছে। এছাড়াও অর্জুন সহ আরও বেশকিছু গাছও রয়েছে। সব মিলিয়ে মোট গাছের সংখ্যা ৯৮০টি। প্রকল্প এলাকায় খনন কাজ গতি পেতেই এবার সেই গাছগুলি সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হল। জাতীয় টেন্ডারে অংশ নিয়ে খড়্গপুর আইআইটি অনুমোদিত একটি সংস্থা এই কাজের বরাত পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের থেকে জানা গিয়েছে, প্রথম ধাপে গাছের গোড়ায় জল দিয়ে মাটি নরম করা হচ্ছে। তারপর রুট বল তৈরি করা হচ্ছে। গাছের মূল শিকড় অনুসারেই সেই রুট বল তৈরি করা হচ্ছে। পরবর্তীতে গাছের মূল শিকড় সহ শাখা প্রশাখাগুলিতে রুটিং হরমোনের প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে আইবিএ ও প্যারা হাইড্রোকসি বেনজয়িক ব্যবহার করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে ফাঙ্গাসের প্রকোপ রুখতে ডাল-পালার কাটা অংশে ব্লু কপারের প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। এরপর গাছগুলি যেখানে প্রতিস্থাপন করা হবে সেখানে গর্ত করে মাটির পরিচর্যা করা হবে। মূলত উইপোকার উপদ্রব রুখতে সেখানে বায়োফ্লেক্স ও ক্লোরোপাইরিফকস ব্যবহার করা হবে। পরবর্তীতে সেখানে গাছ প্রতিস্থাপন করা হবে। এরপর গাছের খাদ্য সুনিশ্চিত করার বিষয় আসছে। সেক্ষেত্রে এফওয়াইএম ব্যবহার করা হবে। আশা করা হচ্ছে প্রতিস্থাপনের কিছুদিনের মধ্যেই গাছগুলির নতুন শিকড় নিজের ভিত শক্ত করতে সক্ষম হবে। সেইসঙ্গে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধিও শুরু হয়ে যাবে।
জেলা প্রশাসন সুচারুভাবে মহুয়া গাছের পুনর্বাসন সম্পন্ন করতে চাইছে। জেলাশাসক বিধান রায়ের তত্ত্বাবধানে একটি উপদেষ্টা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিতে বনদপ্তরের ডিএফও, হর্টিকালচার দপ্তরের জেলা আধিকারিকও রয়েছেন। এছাড়াও বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক তথা আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার সোসাইটির চেয়ারম্যান এস কে মিত্রকে সেই কমিটিতে রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে গাছ স্থানান্তর বিশেষজ্ঞ রামচন্দ্র আপ্পারিও রয়েছেন। এস কে মিত্র মূলত গাছের পরিচর্যার বিষয়টি দেখবেন। তিনি নিশ্চিত করবেন, গাছ স্থানান্তর করার আগে থেকে কী কী বিষয়ে নজর দিতে হবে। রামচন্দ্রবাবু গাছ স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় নজরদারি চালাবেন। এছাড়াও স্থানান্তর শেষে মহুয়া গাছগুলির বৃদ্ধির বিষয়ে দু’জনেই তদারকি করবেন। প্রায় ৩৫ বছর পুরোনো গাছগুলির সঙ্গে স্থানীয়দের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। তাছাড়া পরিবেশ রক্ষার বিষয়টিও রয়েছে। এই দু’দিক ভেবেই গাছগুলিকে অন্যত্র সরানো হচ্ছে। গাছ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে এখনও অবধি সাফল্যের হার প্রায় ৮০ শতাংশ। যদিও জেলা প্রশাসন ১০০ শতাংশ সফল হওয়ার চেষ্টায় কাজ শুরু করতে চলেছে। এছাড়াও বনদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, চাঁদা মৌজায় প্রায় পাঁচগুণ গাছও লাগানো হয়েছে।