• পাচারের আগে উদ্ধার তক্ষক
    বর্তমান | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়গঞ্জ ও সংবাদদাতা, ইটাহার:  ধূসর রঙের প্রায় ১৪ সেন্টিমিটার লম্বা একটি প্রাপ্তবয়স্ক তক্ষককে (টোকে গেকো) অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িতে করে পাচারের সময় ধরা পড়ল চার পাচারকারি। একজন নেপাল, একজন উত্তর ২৪ পরগনা, বাকি দু’জন ইটাহারের বাসিন্দা। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিসের অনুমান, ৫০ লক্ষ টাকা মূল্যের তক্ষকটিকে নেপাল হয়ে চিনে পাঠানোর ছক ছিল পাচারকারিদের। তক্ষক উদ্ধারের পাশাপাশি নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে লুপ্তপ্রায় প্রাণী পাচারের তদন্তে নেমেছে বনদপ্তর। 


    রায়গঞ্জের পুলিস সুপার সানা আখতার বলেন, পুলিস গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযানে চালায় ইটাহারে। বন্যপ্রাণী সমেত ৪ পাচারকারিকে পাকড়াও করে বনদপ্তরের হাতে তুলে দেয় পুলিস। অবশেষে বনদপ্তর পাচারকারিদের জেলা আদালতে হাজির করে। সরকারি আইনজীবী নীলাদ্রি সরকার বলেন, ধৃতদের জামিনের আবেদন খারিজ করে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়। পাশাপাশি বনদপ্তরের আবেদন অনুযায়ী, তক্ষকটিকে প্রকৃতির কোলে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে বলেছে আদালত। রায়গঞ্জের ডিএফও ভূপেন বিশ্বকর্মা বলেন, আমরা ধৃত ৪ পাচারকারির ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া শুরু করেছি। 


    বুধবার ইটাহারের চাভোট গ্রামে হাতবদলের জন্য তক্ষকটিকে নিয়ে ঘাঁটি গেড়েছিল পাচারকারিরা। সেখানে নেপালের পাচারকারিরাও আসে। এব্যাপারে আগাম খবর পেয়ে ইটাহার থানার পুলিস সহ বনকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হন। তক্ষক হাতবদলের সময় পুলিস সেখানে হানা দেয়। কয়েকজন পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পিছু ধাওয়া করে পুলিস তাদের ধরে ফেলে। 


    এই চক্রের মাস্টারমাইন্ড উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা তরুণ সরকার। নেপালে পাচারকারি হিসেবে কাজ করত শিবশঙ্কর পাসওয়ান। চক্রের স্থানীয়স্তরে ছিল উত্তম দাস ও বেলাল আলি। যারা পাচারকারিদের ইটাহারে কয়েকদিন ধরে শেল্টার দিয়েছিল। তক্ষকটিকে চোরাপথে নেপালে পাচার করার ছক কষেছিল ধৃতরা। পুলিসের অনুমান, তক্ষকটিকে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে তরুণ সরকার ইটাহারে নিয়ে এসেছিল। তারপর সেটি নেপাল হয়ে চিনে পাড়ি দিত। কিন্তু কীভাবে পুলিসের চোখে ফাঁকি দিয়ে ইটাহারে এই বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীটি এল তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। পুলিস সূত্রে জানা যায়, উত্তম একাধিক অসাধু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। উত্তমের বাড়িতেই পাচারকারিরা আশ্রয় নিয়েছিল।


    স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২-৩ দিন ধরে অপরিচিত কয়েকজনকে গ্রামে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন স্থানীয়রা। তবে কারও বাড়ির আত্মীয় ভেবে কেউ বিষয়টিকে তেমন আমল দেননি। উত্তম স্বাভাবিকভাবেই ঘোরাঘুরি করছিল গ্রামে। তবে উত্তমকে পুলিস গ্রেপ্তার করতেই অবাক স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবিন্দ্রনাথ বর্মন জানান, গ্রামের ছেলে উত্তম সহ তার সঙ্গীরা যদি কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাহলে পুলিস কড়া ব্যবস্থা নিক।
  • Link to this news (বর্তমান)