কর্মরত মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে: হাইকোর্ট
বর্তমান | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এবার কর্মরত মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজ্যকে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। সরকারি এবং বেসরকারি, উভয় ক্ষেত্রেই কর্মরত মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরকে একটি ‘টিম’ গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতি টি শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ।
মূলত নিউটাউন ও সল্টলেক সেক্টর ফাইভে কর্মরত মহিলাদের সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সম্প্রতি একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। মামলাকারীর দাবি ছিল, বহু বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় ২৪ ঘণ্টা কাজ চলে। সেখানকার মহিলা কর্মীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা প্রয়োজন। রাজ্যের তরফে জানানো হয়, ‘রাত্রিসাথী প্রকল্প করেছে রাজ্য, যা মেডিক্যাল কলেজ, হস্টেল সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত মহিলাদের জন্য প্রযোজ্য। আরও জানানো হয়েছে, মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে ইলেকট্রনিক কমপ্লেক্স থানা একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে। সেই বিজ্ঞপ্তিও এদিন আদালতে জমা দিয়েছে। তাতে উল্লেখ, কলেজ মোড়, ওয়েবেল মোড়, এসডিএফ, আরডিবি তথা ইলেকট্রনিক্স থানা অঞ্চলের মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছে পুলিস প্রশাসন। এই এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যাবস্থা করা হয়েছে, যাতে অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। দিন রাত এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিস টহল দিচ্ছে, রাখা হচ্ছে উইনার্স মহিলা বাহিনী। পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এছাড়া, নবদিগন্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় সংবেদনশীল জায়গায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
যদিও হাইকোর্টের নির্দেশ, সরকারি ওই প্রকল্প ছাড়াও, রাতে মহিলাদের নিরাপত্তার প্রয়োজন রয়েছে। স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রধান সচিবকে একটি ‘টিম’ গঠন করতে হবে। ওই টিমের সদস্যেরা দেখবেন, কোথায় কী ধরনের নিরাপত্তার বন্দোবস্ত রয়েছে, কোথায় আরও নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন, বা কোথায় খামতি রয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখে স্বরাষ্ট্র দফতরের ওই ‘টিম’ একটি খসড়া নোটিস তৈরি করবে এবং তা দেওয়া হবে প্রধান সচিবকে। তিনি বিষয়টি বিবেচনা করে কর্মরত মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন। এদিন আদালতে অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে তুলনাও উঠেছে। অনেক রাজ্যে রাতে কর্মরত মহিলাদের জন্য বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করা হয়। রাজ্যে কেন সেই ব্যবস্থা নেই, সেই প্রশ্নও ওঠে। এরপরই রাজ্যকে খসড়া তৈরি করার নির্দেশ দেয় আদালত।
প্রসঙ্গত, নিউটাউন এলাকায় অতীতে একাধিকবার নারী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। কর্মরত না হলেও, গত ৬ ফ্রেব্রুয়ারি রাতে নিউটাউনের লোহাপুলে ১৪ বছরের এক কিশোরীকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করে খুন করা হয়। ভরসন্ধ্যায় নিউটাউনের একটি বেসরকারি হাসপাতালের নার্স ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন। এক কলমিস্ত্রি তাঁর শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ। এক আইটি তরুণী সেক্টর ফাইভ থেকে ফেরার পথে এক ক্যাবচালক তাঁর শ্লীলতাহানি করে। বছর দু’য়েক আগে নিউটাউনের বৈদিক ভিলেজে জন্মদিনের পার্টিতে এক তরুণীকে গণধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছিল। কিশোরীর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে নিউটাউন থমথমে। প্রতিটি ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে অভিযুক্তরা।