• চায়ে কীটনাশক ঠেকাতে সীমান্তে পরীক্ষা কেন্দ্র গড়বে  রাজ্য, বাংলায় প্রবেশের অনুমতি শুধু ছাড়পত্র নিয়েই
    বর্তমান | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ গরম গরম চা না পেলেই নয়। কিন্তু সেই চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে আমরা আদৌ ভাবি কি যে উৎপাদনের সময় তাতে কতটা কীটনাশক মেশানো হয়েছে! তার জন্য আমাদের কতটা ক্ষতি হতে পারে? আমরা না ভাবলেও এমন ঘটনা যে ঘটছে, তার খবর এসে পৌঁছেছে রাজ্য প্রশাসনে। তবে এক্ষেত্রে নজরে রয়েছে বাইরে থেকে আমদানি করা চা পাতা। এই কাণ্ড রুখতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করল রাজ্য সরকার। নিজস্ব উৎপাদন ছাড়াও বাংলায় চা আসে মূলত দুই পড়শি দেশ নেপাল এবং ভুটান থেকে। রাজ্যে ভালো মাত্রায় চা ঢোকে অসম থেকেও। বাংলায় চা উৎপাদনে ২০টিরও বেশি কীটনাশক ব্যাবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু নেপাল, ভুটান থেকে আসা চা পাতায় তা ব্যবহার হচ্ছে কি না, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছে না রাজ্য। সেই কারণেই এবার একেবারে এই সমস্ত দেশের সঙ্গে রাজ্যের আন্তর্জাতিক সীমান্ত চেকপোস্টে চা পরীক্ষা কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে কীটনাশকবিহীন চা পাতার শংসাপত্র পেলে তবেই সীমান্ত পেরিয়ে রাজ্যে চা পাতা বোঝাই গাড়ির প্রবেশের অনুমতি মিলবে। এমনই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সীমান্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত কাস্টমসকেও এই ব্যাপারে কার্যকারী ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজ্যের তরফে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে ১১ ফেব্রুয়ারি। কাস্টমসকে এই প্রসঙ্গে চিঠিও দেওয়া হচ্ছে।


    যেহেতু অসম থেকেও ভালো মাত্রায় এরাজ্যে চা আসে, তাই সংশ্লিষ্ট আন্তঃরাজ্য সীমান্তেও একই নিয়ম চালু হবে। রাজ্যের লেবার কমিশনারেটের এবং শ্রমদপ্তরের অধীন পশ্চিমবঙ্গ টি ডিরেক্টরেটের ইনসপেক্টর এবং তার উপরের র‍্যাঙ্কের আধিকারিকদের বাড়তি ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। তার বলে তাঁরা কীটনাশকযুক্ত চা পাতার গাড়ি ধরতে পারবেন এবং চা পাতা পরীক্ষার জন্য পাঠাতে পারবেন।    


    এই বিষয়ে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক জানান, মানুষের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে কড়াকড়ি করাই একমাত্র উপায়।


    প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য, একাধিক কারণে নেপালে উৎপাদিত চা দার্জিলিংয়েয়ের চা পাতার থেকে প্রতি কেজিতে অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কম দরে বিক্রি হয়। আবার সেই কারণে আমদানি করা কম দামি চা-ও ‘দার্জিলিং টি’ বলে বিকোয় কখনও চড়া দামেই। শেষমেশ তাতে ক্রেতারা বঞ্চিত হন। চায়ের গুণমান এবং তাতে কীটনাশক থাকা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়। অন্যদিকে, ব্যবসায়িকভাবেও ধাক্কা খায় রাজ্যের চা বাগানগুলি। আর শুধুমাত্র এই কারণেই রাজ্যের ২২টি চা বাগান সচল রাখাও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের সিদ্ধান্তটি একদিকে মানুষকে কীটনাশক পান করার হাত থেকে বাঁচাবে, অন্যদিকে রুগ্নতা কাটিয়ে উঠতে পারবে চা বাগানগুলি। দাবি বিশেষজ্ঞ মহলের।


    সূত্রের খবর, ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (এফএসএসএআই) সহযোগিতায় সীমান্ত চেক পোস্টে চা পরীক্ষা কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। বর্তমানে এমন একটি চা পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে শিলিগুড়িতে। বাইরে থেকে আসা চা পাতা পরীক্ষা করার পাশাপাশি রাজ্যের চা উৎপাদনকারীদের মধ্যেও কীটনাশক ব্যাবহার না করা নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে রাজ্য।
  • Link to this news (বর্তমান)