• পাঁচ বছরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ৩০ গজরাজ, ৯ দফা পরামর্শ পরিবেশ মন্ত্রকের
    এই সময় | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার

    গত দশ বছরে দেশে শুধুমাত্র বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে পরিকল্পনামাফিক ৬৩০টি হাতিকে হত্যা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্টে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতিও রীতিমতো উদ্বেগজনক। তথ্য বলছে, পাঁচ বছরে উত্তরবঙ্গে তরাই–ডুয়ার্সে কমপক্ষে ৩০টি হাতিকে তড়িদাহত করে হত্যা করা হয়েছে। মাঠে ফসল তোলার মরশুমেই হাতি মেরে ফেলার ঘটনা বেশি ঘটেছে।

    এ বার হাতি মৃত্যু রুখতে বন দপ্তরের কাছে ন’টি প্রস্তাব পাঠাল কেন্দ্রীয় বন পরিবেশ মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণে থাকা ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো। শেষ হাতি সুমারি অনুযায়ী বর্তমানে গোটা দেশে বুনো হাতির সংখ্যা ২৯,৯৬৪টি। যে ভাবে ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে বা তড়িদাহত হয়ে অথবা বিষ প্রয়োগে হাতি হত্যার ঘটনা ঘটছে, তাতে উদ্বিগ্ন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা।

    ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরোর তরফে যে ন’টি অ্যাডভাইসরি রাজ্য বন দপ্তরকে পাঠানো হয়েছে, সেখানে সংরক্ষিত অরণ্যের ভেতর বা সংলগ্ন এলাকায় হাতি বা বন্যপ্রাণীর করিডরের মধ্যে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩ কেভি বিদ্যুতের তারগুলিকে মাটির নীচ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ৮ জুন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ দপ্তরের গেজেট নোটিফিকেশনে সেকশন ৬০(৩) অনুযায়ী জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্যে, সংরক্ষিত অরণ্যে, ইকোসেনসিটিভ জোনে ৩৩ কেভি বিদ্যুতের তারকে মাটির নীচ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

    সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ না করা হলে কোনও দুর্ঘটনা হলে অথবা হাতির মৃত্যু হলে অভিযুক্তকে তিন মাস জেল অথবা ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হতে পারে। পরামর্শগুলোর মধ্যে রয়েছে, বন্যপ্রাণীর করিডরে ভাল ভাবে বিদ্যুৎ লাইন রক্ষা করা, যৌথ পরিদর্শন (বছরে অন্তত তিন বার), দুর্বল বিদ্যুৎ খুঁটি থাকলে তা দ্রুত বদলে ফেলা, সংরক্ষিত অরণ্যর ভেতর মাটির তলা দিয়ে বিদ্যুৎ তার নিয়ে যাওয়া, ম্যাপ তৈরি করা, স্থানীয়দের সচেতনতা বৃদ্ধি, অবৈধ ভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া ইত্যাদি। তড়িদাহত করে দাঁতাল মেরে ফেলায় গতবছর রাজ্যে প্রথমবার আলিপুরদুয়ারের এক ব্যক্তির কারাদণ্ড হয়।

    বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পরের ক্ষেত্র অধিকর্তা অপূর্ব সেন বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই বিদুৎ দপ্তরের রিজিওনাল ম্যানেজারকে প্রস্তাব দিয়েছি, জঙ্গলের কাছাকাছি কিছু এলাকায় বিদুতের তারকে ইনসুলেটেড করা হোক। পাশাপাশি বিদ্যুৎ দপ্তরের প্রতিনিধি, পুলিশ, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বছরে দু’বার বৈঠক, যৌথ পরিদর্শন করা হচ্ছে। আমরা সতর্ক রয়েছি।’

    উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ শাখার মুখ্য বনপাল ভাস্কর জেভি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই সংরক্ষিত অরণ্যের ভিতর দিয়ে বিদ্যুতের তার মাটির তলা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব রেখেছি। রাজ্যস্তরে আমাদের বৈঠক হচ্ছে। কী কী করা উচিত, তা বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে হাতি মেরে ফেলার ঘটনায় অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সচেতনতামূলক প্রচার অভিযান চলছে সব সংরক্ষিত অরণ্যে। সঙ্গে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

  • Link to this news (এই সময়)