এই সময়, কাটোয়া: মঙ্গলকোটের আটঘড়ায় পথ দুর্ঘটনায় তৃণমূলকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় অবশেষে খুনের অভিযোগই দায়ের হলো। ষড়যন্ত্র করেই খুন করা হয়েছে তৃণমূলকর্মী লালু শেখকে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন নিহতের ছেলে সাহিল শেখ। অভিযুক্তদের তালিকায় চন্দন সরকার ওরফে শান্ত, রেজাউল হকদের মতো নেতাদের নাম রয়েছে।
জেলা রাজনীতিতে এঁরা মঙ্গলকোটের তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরীর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত। প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিই কি ওই মৃত্যু দুর্ঘটনাতেই না কি বিরুদ্ধ গোষ্ঠীকে চাপে ফেলতে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে? কাটোয়ার এসডিপিও কাশীনাথ মিস্ত্রী বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, মঙ্গলকোট থানায় খুনের একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
বুধবার সন্ধ্যায় পথ দুর্ঘটনায় লালু শেখের মৃত্যুর খবর আসে। গুরুতর জখম হন লাখুরিয়া অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি মফিজুল শেখ। দুর্ঘটনার পরেই ষড়যন্ত্রের জল্পনা ছড়াতে থাকে। বৃহস্পতিবার লালু শেখের ছেলে মঙ্গলকোট থানার পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, ঘটনার দিন দুপুরে প্রায় ২৩ জনের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেন শান্ত সরকার, রেজাউল মুন্সি, লাল্টু শেখ।
ওই বৈঠকেই লালু শেখ ও মফিজুল শেখকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা মাফিক ঘটানো হয় একটি দুর্ঘটনা। লালু ও মফিজুলের মোটর বাইকের পিছনে ধাক্কা মারে একটি গাড়ি। তাঁরা ছিটকে পড়লে লাগোয়া বাগান থেকে প্রায় ২৩ জন দুষ্কৃতী বেরিয়ে আসে। ওই অবস্থায় মারধর করা হয় লালু ও মফিজুলকে।
লালুর মৃত্যু নিয়ে নিশ্চিত হয় দুষ্কৃতীরা। মারধরে মফিজুল অজ্ঞান হয়ে গেলে তিনি মৃত ভেবে দুষ্কৃতীরা এলাকা ছেড়ে চম্পট দেয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ করার দাবি জানিয়েছেন অভিযোগকারী সাহিল শেখ।
এই অভিযোগের পরেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক জল্পনা। শান্ত সরকার দীর্ঘদিন ধরেই অপূর্বর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত। একসময়ে অপূর্বর ডান হাত বলে মনে করা হতো রেজাউলকে। কিন্তু বিগত কয়েকমাস তাঁদের মধ্যে সেই সুসম্পর্ক নেই।
অভিযোগে তাঁর নাম থাকা নিয়ে শান্ত বলেন, ‘অপূর্ব চৌধুরী ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা থেকে এই অভিযোগ করিয়েছে। এই ঘটনায় আমার কোনও হাত নেই। রাজনৈতিক ভাবে না পেরে এ সব করছে।’ রেজাউলের বক্তব্য, ‘একটি পথ দুর্ঘটনাকে খুন হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশ সঠিক ভাবে তদন্ত করলেই সব বোঝা যাবে।’
যদিও অপূর্বর দাবি, কোনও প্রতিহিংসা থেকে এই অভিযোগ করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘মৃতের বাড়ির লোক অভিযোগ করেছে। আমার কোনও মদতে অভিযোগ হয়নি। ঘটনাক্রম দেখলেই বোঝা যায়, এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়। বাইকে একটা আঁচড় পর্যন্ত পড়ল না, হেলমেট ছিল অথচ মাথা চৌচির হয়ে গেল! পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে গুলি করে খুন করা হয় তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি ডালিম শেখকে। সেই অভিযোগের সঙ্গে এই অভিযোগের ধরনে মিল পাচ্ছেন অনেকেই। তখনও অভিযোগ উঠেছিল, বিকাশ চৌধুরী, রহমতুল্লা চৌধুরীর মতো তৃণমূল নেতারা গোপন বৈঠকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন।