• বেআইনি নির্মাণকে ছাড়! পুরসভার ক্ষমতায় কোপ
    এই সময় | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • অসাধু প্রোমোটাররা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যাতে নিজেদের ইচ্ছে মতো কোনও বেআইনি নির্মাণকে ‘বৈধ’ করে নিতে না পারেন তার জন্য এ বার রাজ্যস্তরে বিশেষ নজরদারি কমিটি গঠন করল রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর। এখন সেই কমিটির পরামর্শ মেনেই অবৈধ নির্মাণকে আইনি ছাড়পত্র দিতে পারবে পুরসভাগুলি। ক’দি‍ন আগেই এই মর্মে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে পুরসভাগুলির কাছে।

    প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য, বেআইনি নির্মাণকে বৈধতা দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরসভাগুলি এতদিন ধরে যে ক্ষমতা ভোগ করত, নয়া পদক্ষেপে সেটা অনেকটাই খর্ব হবে। সেই সঙ্গে কমবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। তার ফলে বেআইনি নির্মাণের প্রবণতা অনেকটাই কমবে বলে আশা করছেন সরকারি কর্তারা।

    পুর দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এতদিন পর্যন্ত কলকাতার বাইরে যে কোনও পুর এলাকায় বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্ট মেনে বোর্ড অফ কাউন্সিলরসের বৈঠকে বেআইনি নির্মাণকে আইনি বৈধতা দেওয়া হতো। েসই সুযোগে অনেক প্রোমোটার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বেআইনি নির্মাণ করেও পার পেয়ে যেতেন।

    পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘বোর্ড অফ কাউন্সিলরসে মূলত শাসক দলের মনোনীত সদস্যরাই থাকেন। তাঁদের অনেক রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থাকে। তার ফলেই মফসসলের দিকে বেআইনি নির্মাণের প্রবণতা বাড়ছে এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পরবর্তীকালে তাতে আইনি সিলমোহর দেওয়া হচ্ছে। সেটা বন্ধ করতেই বোর্ড অফ কাউন্সিলরসের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার বিশেষজ্ঞ কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।’

    এখন থেকে বেআইনি নির্মাণকে বৈধতা দেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে পুরসভাগুলিকে। সবদিক খতিয়ে দেখে তারা যদি সবুজ সঙ্কেত দেয় তবেই কোনও বেআইনি নির্মাণকে আইনি বৈধতা দিতে পারবে বোর্ড অফ কাউন্সিলরস। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞ কমিটিতে মোট আটজন সদস্য রয়েছেন। কমিটির চেয়ারপার্সন করা হয়েছে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব অরূপরতন মুখোপাধ্যায়কে।

    মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেটের একজন চিফ ইঞ্জিনিয়ার, ল অফিসার, চিফ টাউন প্ল্যানার, খড়গপুর আইআইটির আর্কিটেকচার বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান বিপ্লবকান্তি সেনগুপ্ত, আর্কিটেক্ট সুবীরকুমার বসু এবং অঞ্জন উকিলকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। নির্দেশনামায় বলা হয়েছে, বিল্ডিং প্ল্যান সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞ কমিটি চাইলে সংশ্লিষ্ট পুরসভার কমিশনার, এগজ়িকিউটিভ অফিসার অথবা পুরসভার কোনও টেকনিক্যাল অফিসারকে মিটিংয়ে ডেকে পাঠাতে পারে।

    পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, ‘একমাত্র কলকাতা ছাড়া রাজ্যে আর যত ছোট–বড় মিউনিসিপ্যালিটি রয়েছে তাদের হাতে বিশেষজ্ঞ আর্কিটেক্ট অথবা অভিজ্ঞ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার নেই। বেআইনি নির্মাণকে ছাড়পত্র দেওয়ার আগে যে সব জিনিস খতিয়ে দেখা উচিত সেটা বাস্তবে হচ্ছে না। তাতে ভবিষ্যতে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সে জন্যই রাজ্যস্তরে বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারাই এখন থেকে সরকারের চোখ–কান হিসেবে কাজ করবে।’

  • Link to this news (এই সময়)