• বেসরকারি গাড়ির মেয়াদ বাড়াতে কর দ্বিগুণ করার প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সরকারের, চিন্তায় পরিবহণ ব্যবসায়ীরা
    আনন্দবাজার | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • ১৫ থেকে ২০ বছর বা তার বেশি বয়সের গাড়ির মেয়াদ বৃদ্ধির ‘সার্টিফিকেট অফ ফিটনেস’ (সিএফ) কর বাড়ানোর প্রস্তাব করল কেন্দ্রীয় পূর্ত জাতীয় সড়ক নির্মাণ এবং পরিবহণ মন্ত্রক। গত ৭ ফেব্রুয়ারি এই সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তাব এনেছে তারা। সেই খসড়া অনুযায়ী সব গাড়ির মেয়াদ বৃদ্ধি করতে দ্বিগুণ হারে কর চাপানো হয়েছে। আর ২০ বছর বয়স উত্তীর্ণ যানবাহনের ২১তম বছরে সিএফ করতে গেলে গুনতে হবে তিন গুণ অর্থ।

    প্রস্তাবিত কর কাঠামো দেখে প্রমাদ গুনতে শুরু করেছেন পরিবহণ ব্যবসায়ীরা। কারণ, যে পরিমাণ কর আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বেসরকারি বাসমালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বেশি। যেখানে ১৫-২০ বছর বয়সের সময়সীমার বেসরকারি বাসের সিফ বাবদ খরচ করতে হবে ১৮ হাজার টাকা, সেখানে ২১ বছর বয়স বা তার বেশি মেয়াদের যে কোনও বাসের সিফ বাবদে খরচ হবে ৩৬ হাজার টাকা।

    শহর কলকাতা এবং দিল্লিতে দূষণজনিত কারণে আদালতের নির্দেশে ১৫ বছরের মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়ি চালানো যায় না। কিন্তু দেশের বাকি অন্য শহর, গ্রামাঞ্চলে ১৫ বা ২০ বছরের মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়ি রাজ্য সরকারের পরিবহণ দফতরের শংসাপত্র নিয়ে চালানো যায়। কিন্তু এখন যে ভাবে মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়িগুলির কর কাঠামো দ্বিগুণ বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে তিন গুণ করা হয়েছে, তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সদিচ্ছা’ নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে পরিবহণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে। পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারি বাসমালিকদের একাংশের মতে, কেন্দ্রীয় সরকার এ ভাবে করবৃদ্ধি করে পুরনো গাড়িগুলিকে পাকাপাকি ভাবে বাতিল করে দেওয়ারই কৌশল নিয়েছে। এমনিতেই পুরনো গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণে বিস্তর খরচ। কর দ্বিগুণ করা হলে পুরনো বাস চালিয়ে আর লাভ করা যাবে না। বাধ্য হয়েই বাসমালিকেরা নতুন বাস কিনবেন। এতে ‘ঘুরপথে’ বেসরকারি বাস কেনায় উৎসাহ বাড়বে বলে অভিযোগ উঠছে। পাশাপাশিই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, এমন হলে অনেক বেসরকারি বাসমালিক পরিবহণ শিল্প থেকে সরে যেতে পারেন। কারণ, করোনাকালে লকডাউনের সময় বেসরকারি বাস পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সেই ক্ষতে এখনও প্রলেপ পড়েনি। তার উপর কেন্দ্রীয় সরকার প্রস্তাবিত করকাঠামো কার্যকর করলে তা বেসরকারি বাসমালিকদের কাছে ‘ক্ষতিকর’ হবে বলেই মনে করছেন পরিবহণ ব্যবসায়ীরা।

    আগামী এক মাসের মধ্যে ওই প্রস্তাবিত করকাঠামো নিয়ে নিজ নিজ অভিমত বা পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে পরিবহণ ব্যবসায়ী বা পরিবহণ সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে যুক্তদের। তবে সেই মতামত বা পরামর্শ কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রক গ্রহণ করবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নন বেসরকারি বাসমালিকেরা। রাজ্য পরিবহণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘খসড়া প্রস্তাবটি ভাল করে খতিয়ে দেখে সচিবদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হবে। কোনও ক্ষেত্রে আইনি পরামর্শ প্রয়োজন হলে তা-ও নিতে হবে। তবে যে হেতু বিষয়টি এখনও খসড়া স্তরে রয়েছে, তাই রাজ্যের তরফ থেকে পাল্টা প্রস্তাব দেওয়া যেতেই পারে।’’

    বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির নেতা রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কেন্দ্রের প্রস্তাব নিয়ে আমাদের তীব্র আপত্তি রয়েছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা-সহ দেশের গ্রামীণ এলাকাগুলিতে ২০ বছর বয়স উত্তীর্ণ বাস রয়েছে। নতুন প্রস্তাব মেনে সিফ করাতে গেলে তিনগুণ অর্থ খরচ করতে গেলে নানা সমস্যা দেখা দেবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এর ফলে যেমন সিফ ছাড়া বাস চালানোর প্রবণতা বাড়বে, তেমনই নতুন বাসও রাস্তায় নামবে না। তাতে সরকার এবং সাধারণ মানুষ উভয়ই সমস্যায় পড়বে। বেকারত্বও বৃদ্ধি পাবে।’’ রাহুলের মতে, কেন্দ্রীয় সরকারের ভাবা উচিত যে, কৃষিক্ষেত্রের পর দেশের সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয় পরিবহণ ক্ষেত্রে। এ ভাবে পরিবহণ শিল্পকে ‘আঘাত’ করা হলে যেমন মানুষের রুজিরুটিতে টান পড়বে, তেমনই দেশও অচল হয়ে পড়বে। তাঁর পরামর্শ, ‘‘গাড়ির স্বাস্থ্যপরীক্ষায় জোর দেওয়া হোক। কিন্তু তার মূল্য অতিরিক্ত না বাড়িয়ে।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)