• সুলতানি আমলের প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণের দা‍বি রায়গঞ্জবাসীর
    এই সময় | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নীলাঞ্জন দাস, রায়গঞ্জ

    ইট–কাঠ পাথরের আড়ালে লুকিয়ে থাকে ইতিহাস। কিন্তু সংরক্ষণ না–করতে পারলে সেটি কালের ধুলোয় চাপা পড়ে যায়। তেমনই এক ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে রায়গঞ্জে। রায়গঞ্জের ২ নম্বর কমলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কসবা–মহেশো এলাকায় দু’টো পিলার আর একটা উঁচু ঢিবি রয়েছে। এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ পুজো করেন পিলার দু’টির গায়ে খোদাই করা গণেশ মূর্তির।

    স্থানীয় বাসিন্দা গণেশচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘বাবা-দাদুদের কাছে শুনেছি স্থানীয় এই জনশ্রুতি। প্রায় ৬০০ বছর আগে এখানে রাজত্ব করতেন রাজা গণেশ। সেই রাজার আমলেই কালা পাহাড়ের আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যায় প্রাসাদটি। এটি তারই ধ্বংসাবশেষ।’

    ইতিহাসবিদরা বলছেন, রাজা গণেশ নয়, এই প্রাসাদ ছিল রাজা মহেশের। সেটিও প্রায় ৫০০ বছর আগের কথা। রাজা মহেশ ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর উপাসক। ১৪৯৩ সালের শেষে মধ্যযুগীয় সুলতান হোসেন শাহ–র আমলে এই প্রাসাদের উপর নেমে আসে আক্রমণ। হত্যা করা হয় রাজা মহেশকেও। তাঁর নামানুসারে এক সময়ে এই এলাকার নাম ছিল মহেশ পরগনা। সেই থেকেই এলাকাটির বর্তমান নাম কসবা–মহেশো।

    ইতিহাসবিদরা আরও জানিয়েছেন, সে সময়ে দিল্লির সুলতান ধোকরপোষ ও বাজারপোষ তাঁদের দুই পীরকে রায়গঞ্জে দূত হিসেবে পাঠান। তাঁরাই মহেশের সমস্ত খবরাখবর সুলতানকে দিতেন। আক্রমণের সময়ে মহেশের গোপন সুড়ঙ্গের কথাও সুলতানকে জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা।

    ইতিহাস বলে, সেই সুড়ঙ্গের বাইরেই মহেশকে হত্যা করা হয়। বিভিন্ন সময়ে সেখানকার মাটি খনন করা হলে মিলেছে একাধিক বিষ্ণু মূর্তি। সে গুলি রায়গঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এই ইতিহাস। প্রাচীন আমলের বেঁচে থাকা এই স্বল্প নিদর্শনকে বাঁচিয়ে রাখতে এটির সংরক্ষণের দাবি তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে ইতিহাসবিদরা।

    ইতিহাসবিদ বৃন্দাবন ঘোষের কথায়, ‘রাজা মহেশের রাজত্বকালের একটি প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে এখানে। যেখানে থেকে গিয়েছে সুলতানি আক্রমণের একটি অধ্যায়। দীর্ঘদিন ধরে সেটির দেখভাল হয় না। আমরা এটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছি।’

    ওই জায়গায় মাটির নীচে বহু জিনিস চাপা পড়ে রয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। সংরক্ষণের জন্য প্রশাসনের কাছে দরবারের কথা জানিয়েছেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দুলাল সরকার। তিনি বলেন, ‘আমরাও চাই এটি সংরক্ষণ করা হোক। এটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠলে এলাকারও উন্নয়ন হবে।’

    রায়গঞ্জের মহকুমাশাসক কিংশুক মাইতি বলেন, ‘এলাকারবাসী যদি এ বিষয়ে লিখিত ভাবে আমাকে জানান, তা হলে অবশ্যই নির্দিষ্ট দপ্তরকে জানিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)