ঋতভাস চট্টোপাধ্যায়
স্ত্রীর মানভঞ্জনে পুরসভার ‘লাভ’ সাইন খুলে নিতে হাত কাঁপেনি দু’বার। সেই উপহার অবশ্য আর বৌকে দেওয়া হয়নি। তার আগেই থানা-পুলিশ হয়ে একাকার। কিন্তু এত কিছুর পরেও ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে স্ত্রীকে কাছে পেলেন না সেই ‘লাভ চোর’ বাপন বাদ্যকর। আপাতত নেশামুক্তি কেন্দ্রে রয়েছেন তিনি। বাপনের জন্য ভালোবাসার দিনে চিঠি লিখেছেন স্ত্রী শিল্পী— ‘তোমাকেই চেয়েছি, তোমাকেই চাইব…’।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে সিউড়িতে আচমকাই শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। সৌন্দর্যায়নের জন্য পুরসভার পক্ষ থেকে লাগানো হয়েছিল ‘আই লাভ সিউড়ি’ বোর্ড। কিন্তু বড়দিনের আগের রাতে সেই বোর্ড থেকে গায়েব হয়ে যায় ‘লাভ’ চিহ্নের ডিজিটাল গ্লোয়িং সাইনটি। জানা যায়, বৌয়ের রাগ ভাঙানোর জন্য পুরসভার লাগানো ‘হৃদয়’ খুলে স্ত্রীর ‘চরণ’-এ রাখতে চেয়েছিলেন বাপন। তবে হাত ফস্কে তা ভেঙে যায়। পুলিশের হাতে ধরে পড়েছিলেন ‘প্রেমিক’ বাপন। চুরির কারণ জানতে পেরে হতবাক হয়ে যান সিউড়ি থানার আইসি সঞ্চয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রীঘরে পাঠানোর পরিবর্তে ওই যুবকের থেকে একটি মুচলেখা নিয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ। সিউড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় একগুচ্ছ লাল গোলাপ কিনে দেন বাপনকে। থানায় দাঁড়িয়ে তা স্ত্রী শিল্পা বাদ্যকরের হাতে তুলে দেন তিনি।
ভালোবাসার সপ্তাহ কেমন কাটছে এই যুগলের? খোঁজ নিল ‘এই সময় অনলাইন’। জানা গিয়েছে, সেই বাপন এখন নেশামুক্তি কেন্দ্রে রয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর চারেক আগে মহম্মদ বাজার থানা এলাকার কোরাপুকুরের বাসিন্দা বাপন বাদ্যকরের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সিউড়ির মল্লিকগুণ পাড়ার বাসিন্দা শিল্পা বাদ্যকরের। বাপন পেশায় গাড়ি চালক। মা,বাবা, স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে সংসার ভালোই চলছিল বাপনের। কিন্তু সম্প্রতি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন বাপন। সেই নিয়েই শিল্পার সঙ্গে তাঁর অশান্তি চরমে ওঠে। গত ২৫ ডিসেম্বর রেগে বাপের বাড়ি চলে যান শিল্পা। স্ত্রীর চলে যাওয়ার কথা জানতে পেরে বাপনও রাতেই সেখানে যান রাগ ভাঙাতে। ফুলের তোড়াও কিনে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন স্ত্রীর জন্য। কিন্তু রাত অনেকটাই বাড়ার কারণে সমস্ত ফুলের দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই নাকি সেই লাভ সাইন চুরি করেছিলেন তিনি।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি। রাস্তায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন বাপন। সেই সময়েই গাড়ি থেকে পড়ে ভেঙে যায় লাভ সাইনটি। ঠিক এর দু’দিন পরে কাউন্সিলারের অভিযোগের ভিত্তিতে সিউড়ি থানার পুলিশ আটক করেছিল তাঁকে। এত কাণ্ডের পরেও বাপনকে ক্ষমা করে বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন স্ত্রী শিল্পা।
শিল্পা জানান, বাড়ি ফিরে ডায়েরির পাতায় ওই দিনের ঘটনা লিখছিলেন বাপন। ইউ টিউবে চ্যানেল খোলারও পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। কিন্তু পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেই নেশাই।
স্বামীকে চিকিৎসার জন্য বহরমপুরে নিয়ে যান শিল্পা। চিকিৎসকদের পরামর্শ মোতাবেক এখন নেশামুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি রয়েছেন বাপন। এ দিকে বাড়ি থেকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে স্বামীকে চিঠি লিখেছেন বাপনের স্ত্রী। তিনি লেখেন, ‘তোমাকে যে দিন ওঁরা নেশা মুক্তি কেন্দ্রে নিয়ে গেল, সে দিন আমার বুকটা ফেটে গিয়েছিল…’। মাদক ভুলে মনের টানে তাঁর কাছে ফিরে আসবেন সুস্থ বাপন আশায় দিন গুণছেন শিল্পা।
এ দিকে থানায় বাপনের দেওয়া সেই গোলাপের তোড়া আজও ঘরে রেখে দিয়েছেন শিল্পা। ছেলের এই ‘ভালোবাসা’-র জন্য কাণ্ডকারখানায় খুশি তাঁর বাবা-মা-ভাই। বাপনের ভাই আনন্দ বাদ্যকর বলেন, ‘দাদা আমার আইডল।’