প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রস্তাব বাতিল ঠিকই ছিল! জ্যোতি বসুকে কার্যত অস্বীকার সিপিএমের
প্রতিদিন | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: আসন্ন মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসের প্রাক্কালে সিপিএমের দলিলে ফিরে এল ১৯৯৬ সালে প্রয়াত জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়ার প্রসঙ্গ। যে জ্যোতিবাবুকে সামনে রেখে বছরের পর বছর পশ্চিমবঙ্গে সরকার চালিয়েছে, তাঁকেই কার্যত অস্বীকার করল সিপিএম। একদিকে বাংলায় জ্যোতিবাবুর নামে গবেষণা কেন্দ্র গড়ছে পার্টি, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলিলে তাঁর মুখই কার্যত মুছে দিল লাল পার্টি।
দলের কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে গৃহীত সর্বশেষ দলিলে নাম না করে ১৯৯৬ সালে জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে ফের জানিয়েছে সিপিএম। দলিলে জ্যোতিবাবুর নাম না করে লেখা হয়েছে, তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পার্টিতে সেসময় খারিজ করার সিদ্ধান্ত ঠিকই ছিল। স্বয়ং জ্যোতিবাবু প্রধানমন্ত্রী পদের প্রস্তাব বাতিলের সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক ভুল’ বলেছিলেন। কিন্তু আজ তা খারিজ করে পার্টি কংগ্রেসের জন্য তৈরি সিপিএমের দলিলে গৃহীত হয়েছে, ‘পার্টির মধ্যে সংসদীয় মোহ বিরাজ করছে, যা দলের রাজনৈতিক রণকৌশলগত লাইনকে প্রভাবিত করার পাশাপাশি নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি পড়ছে পার্টি এবং কর্মীদের উপর।’ আর এই প্রসঙ্গেই সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের দলিলে জ্যোতিবাবুর নাম না করে ১৯৯৬ সালে পার্টির শীর্ষ কমিটির সেই সংশোধনী নোটের উল্লেখ করেছে।
১৯৯৬ সালে লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপিকে আটকাতে অকংগ্রেসি দলগুলি সর্বসম্মত প্রস্তাব দেয়, পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী হোন। কিন্তু সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির ভোটাভুটিতে খারিজ হয়ে যায় সেই প্রস্তাব। পরে পার্টির এই সিদ্ধান্তকে প্রকাশ্যেই ‘ঐতিহাসিক ভুল’ বলে নিজের অসন্তোষের কথা জানিয়ে দেন খোদ জ্যোতিবাবু।
তাঁর এই মন্তব্যে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলেও মুখরক্ষা করতে তখন সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি প্রেস বিবৃতি দিয়ে বলেছিল, পার্টি কোনও ভুল করেনি। যদিও সেই পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক হরকিষেন সিং সুরজিৎ থেকে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়রা ‘ঐতিহাসিক ভুল’ তত্ত্ব প্রকাশ্যে সমর্থন করেছিলেন। ২০১১ সালে রাজ্যে তিন দশক পর ক্ষমতা হারিয়ে এবং পরে লোকসভা-বিধানসভা ভোটে শূন্য হয়ে পড়ায় বঙ্গ সিপিএম বারে বারেই জ্যোতিবাবুর অবদানের কথা তুলে ধরেছে। ভোট প্রচারেও সিপিএমের ছোট-মাঝারি-বড় নেতারা তাঁকেই সামনে রেখে বক্তৃতা করেছেন। এমনকী, আসন্ন রাজ্য সম্মেলনের আগে তাঁকে সামনে রেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালাচ্ছেন আলিমুদ্দিনের নেতারাও। কিন্তু ক্রমশ শক্তিক্ষয় হতে হতে শূন্যে পরিণত হওয়ার পরও জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে আঁকড়ে পড়ে রয়েছে সিপিএম। যদিও কেন্দ্রীয় কমিটির এবারের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে শুক্রবার সিপিএমের সম্পাদকমণ্ডলীর এক প্রবীণ নেতার মন্তব্য, ‘‘আমজনতার মন তখনও বুঝতে পারেনি পার্টি, আর এখনও বুঝতে পারছে না বলেই শূন্যে পৌঁছে গিয়েছে, শূন্যতেই থাকবে।’’
আমজনতার মন বুঝতে না পারায় বাংলায় যেমন বিজেপিকে কার্যত ওয়াকওভার দিয়ে শুধুমাত্র তৃণমূলকেই টার্গেট করেছে, তেমনই ত্রিপুরাতেও একই হাল। আগামী এপ্রিলে মাদুরাইয়ে সিপিএমের ২৪তম পার্টি কংগ্রেস। তার আগে পার্টির নোটের ৭নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়ার প্রসঙ্গের। তাৎপর্যপূর্ণ হল, ১৯৯৬ সালে জ্যোতিবাবুর প্রধানমন্ত্রী হওয়া আটকে দিয়েছিলেন যে প্রকাশ কারাত, তিনিই নিউটাউনে জে্যাতি বসু রিসার্চ সেন্টারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তাঁর আদর্শ মনে করিয়েছেন। যদিও জ্যোতিবাবুকে খারিজ করার লাইনে সিংহভাগ সিপিএম কর্মী হতাশ, ক্ষুব্ধ বলে জানা গিয়েছে।