শুধু ক্ষীরের গজাই বিক্রি হয় প্রায় ১০০ কুইন্টাল। উরস মেলায় ২০ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হয়। তবে এ বার বাংলাদেশ থেকে পুণ্যার্থীদের নিয়ে আসছে না কোনও ট্রেন। ক্ষতির আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীদের দাবি ক্ষতি মেনে নিয়েও দেশের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন তাঁরা।
১২৪তম বার্ষিক উরস উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশের রাজবাড়ি থেকে পুণ্যার্থীদের নিয়ে বিশেষ ‘মৈত্রী ট্রেন’ এ বার আর আসছে না মেদিনীপুর শহরে। শহরের জোড়া মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রতি বছর ৪ঠা ফাল্গুন অনুষ্ঠিত বার্ষিক ‘উরস’ উপলক্ষে ১৯০২ সাল থেকে এই বিশেষ ট্রেন পুণ্যার্থীদের নিয়ে আসে মেদিনীপুরে। ট্রেনে আসেন বাংলাদেশের প্রায় ২ হাজার পুণ্যার্থী। লটারির মাধ্যমে তাঁদের বেছে নেয় বাংলাদেশের আঞ্জুমন-ই-কাদরী কমিটি। ফলে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে মেদিনীপুর শহরের এই জোড়া মসজিদ প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে দুই বাংলার মিলনস্থল।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে এ বার ছন্দপতন। ১৯৬৫ ও ১৯৭১-এ যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির জন্য এবং ২০২১ ও ২০২২-এ করোনা পরিস্থিতির জন্য ট্রেন আসেনি। দেশের সম্মান ও নিরাপত্তার স্বার্থে ট্রেন না আসার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েও, নিজেদের ব্যবসায়িক ক্ষতির কথা অকপটে স্বীকার করে নিচ্ছেন শহর মেদিনীপুরের ব্যবসায়ীরা।
তাঁদের কথায়, মাত্র দু’দিনের জন্য বিশেষ ট্রেনে করে আসেন প্রায় দু'হাজার পুণ্যার্থী। তবে, আরও দু’দিন আগে থেকে অর্থাৎ ১ ফাল্গুন থেকেই বাসে, বিমানে করেও আরও হাজার খানেক পুণ্যার্থী আসেন আন্তর্জাতিক এই উৎসব উপলক্ষে। তাঁরা মেদিনীপুর শহর থেকে ক্ষীরের গজা-সহ নানা ধরনের মিষ্টি, মশলা, অ্যালুমিনিয়ামের বাসনপত্র, মাদুর, বাতাসা, নকুলদানা, জামাকাপড় প্রভৃতি কিনে নিয়ে যান। শুধু ১০০ কুইন্টাল ক্ষীরের গজাই বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন জেলার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির অন্যতম সদস্য সৌম্যদীপ গুহ, স্বপন কুন্ডুরা।
মিষ্টি ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘ক্ষীরের গজা ছাড়াও কালোজাম, ল্যাংচা, মিহিদানা প্রভৃতি কুইন্টাল কুইন্টাল বিক্রি হয়। শহরের জোড়া মসজিদ সংলগ্ন এলাকার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা এ বার লক্ষ লক্ষ টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হবেন।’ ছোট-বড় সব মিলিয়ে মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০-৬০ লক্ষ টাকা বা আরও বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। শহরের মিঞাবাজার, নিমতলাচক, নান্নুরচক, স্কুলবাজার এলাকার ভূষিমাল ও অ্যালুমিনিয়াম ব্যবসায়ীরাও জানান, এ ক'দিনে (সর্বাধিক ৫-৭ দিনে) গড়ে তাঁদের ১-২ লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়। এছাড়াও উরস মেলায় নানা ধরনের কেনাকাটা-সহ প্রায় ২০-২৫ কোটি টাকার ব্যবসা হয়।
মেলা কমিটির সদস্য আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘মেদিনীপুরের অর্থনীতিতে একটা বড় আঘাত। তবে, প্রশাসনের সিদ্ধান্ত সবার আগে। আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। মেলা আগের মতোই হবে। তবে, কেনাকাটা অনেক কম হবে তা বোঝাই যাচ্ছে।’ মেদিনীপুর শহরের ব্যবসায়ী পি.কে মাহাত, তরুণ দে, শ্যামল কুমার দত্তরা বলেন, ‘এটা ঠিক আমাদের অনেক ক্ষতি হবে। তবে, ওদেরও একটা শিক্ষা দেওয়ার দরকার ছিল।’
কংগ্রেস নেতা তথা ব্যবসায়ী শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্য আমরা দুঃখিত। আমরা চাই দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। তবে, এটাও ঠিক যে দেশকে আমরা জন্ম দিয়েছি, তাদের অহং, অত্যাচার মেনে নেওয়া যায় না। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে আমরাও স্বাগত জানাই।’ মেদিনীপুরের বিধায়ক সুজয় হাজরা বলেন, ‘উরসকে কেন্দ্র করে দুই বাংলার মিলনস্থল হয়ে ওঠে মেদিনীপুর। এ বার বাংলাদেশের ট্রেন আসবে না। আমরা দুঃখিত! কষ্ট পাচ্ছি। কিন্তু, কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন আমাদের রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আশা করব পরের বছর আবার সব স্বাভাবিক হবে।’ উল্লেখ্য, শুক্রবার থেকে মেলা শুরু হয়েছে। চলবে ১৮ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার পর্যন্ত।