নারায়ণগড়ে নদীর পাড়ে পিকনিকে মেতে ‘ব্ল্যাক ডে’ পালন বিজেপির নেতাকর্মীদের, হাজির দিলীপ
বর্তমান | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সংবাদদাতা বেলদা: শুক্রবার ছিল ‘ব্ল্যাক ডে’ বা ‘কালা দিন। ২০১৯ সালের ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি। প্রেম দিবসের দিনই ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলার সাক্ষী ছিল ভূস্বর্গের পুলওয়ামা। শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও পাক মদতপুষ্ট হামলার নিন্দা জানাতেই প্রেম দিবসকেই ‘ব্ল্যাক ডে’ হিসেবে গোটা দেশে পালন করার ডাক দিয়েছিল বিজেপি সরকার। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে দিনটি মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়। অথচ, নারায়ণগড় এদিন দেখল অন্য ছবি। স্বঘোষিত ‘দেশপ্রেমিক’ বিজেপির নেতা-কর্মীরা সবাইকে অবাক করে কেলেঘাইয়ে পাড়ে মেতে উঠলেন পিকনিকে! সেখানে স্বয়ং হাজির বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতা তথা প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও!
লোকসভা নির্বাচনের পর নারায়ণগড় সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপি কর্মীদের নিয়ে তেমন কোন সংগঠনিক কার্যকলাপ লক্ষ্য করা যায়নি। সোমবারের মধ্যে ঘোষিত হতে চলেছে নতুন মণ্ডল সভাপতিদের নাম। এর মাঝেই দলীয় কর্মীদের নিয়ে নারায়ণগড়ে পিকনিকে মাতলেন দিলীপবাবু। আর এমন একটি দিনকে বাছলেন, যে দিনটি আজও ভারতবাসীর মনে দগদগে। সন্ত্রাসবাদী হামলায় ঝরে গিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরতাজা ৪৪টি প্রাণ!
তা হলে কেন দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সহ নারায়ণগড়ের বিজেপি নেতা-কর্মীরা ব্ল্যাক ডে’তে পিকনিক করার মতো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিলেন? জেলা বিজেপির সভাপতি সুদাম পণ্ডিতের সাফাই, ‘দিলীপবাবু বলেছিলেন, অনেকদিন ধরেই দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বার্তালাপ হয়নি। তাই একটা বনভোজনের আয়োজন করা হোক। সেই মতো দলীয় কর্মীরা নিজেরা চাঁদা তুলে পিকনিক করেছেন। আমি, দিলীপদা ছাড়াও বেশ কয়েকজন দলীয় নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলাম। তবে আমরা কালো ব্যাজ পরে ছিলাম।’
‘ব্যাজ’ পরলেই কি সাতখুন মাফ? প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরেই। বিজেপির প্রবীণ নেতা, নারায়ণগড় বিধানসভার তিনবারের প্রার্থী তথা জেলা কমিটির সদস্য কৃষ্ণপ্রসাদ রায় বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই দল করছি। কিন্তু আজকের মতো একটা দুঃখের দিনে দলীয় নেতারা ভুরিভোজের আয়োজন করবেন, তা কল্পনাও করতে পারছি না। রাষ্ট্রবাদী দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকর্মীদের যদি এই ভূমিকা হয়, তা হলে মানুষের কাছে কি বার্তা পৌঁছবে! লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে।’ দলের আর এক নেতা তরুণ রাউত বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। তিনি বলেন, ‘যেখানে আমাদের দল দেশপ্রেমকে সবার আগে রাখে, সেখানে এমন একটা দিনে পিকনিক করবে এবং তা কার মস্তিষ্কপ্রসূত বুঝতে পারছি না। সেই পিকনিকে দিলীপবাবুও যে থাকবেন , ধারণা করতে পারিনি।’ মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, বিজেপি দলটি ধর্মের নামে মেকি দেশপ্রেম জাগানোর চেষ্টা করে।’ যদিও দিলীপবাবু বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এদিন নারায়ণগড়ের পোক্তাপোলে কেলেঘাই নদীর পাড়ে প্রায় চার শতাধিক কর্মী পিকনিকে যোগ দিয়েছিলেন। ছিল এলাহি আয়োজন—মাছ-মাংস, মিষ্টির হরেক খাবার। স্বভাবতই সবার মধ্যমণি ছিলেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। সাংসদ থাকাকালীন তাঁর তহবিলের অর্থে নির্মিত একটি রাস্তার উদ্বোধন করেন তিনি। সেখান থেকেই চলে আসেন পিকনিকে। -নিজস্ব চিত্র